হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে হেফাজতের ব্যাখ্যা
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৪ পিএম
হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেছেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন-২০২৩ (খসড়া)’ আমাদের নজরে এসেছে। আর বিভিন্ন সূত্র মারফত আমরা এটিও জানতে পেরেছি আইনটি অচিরেই পাশ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। হেফাজতে ইসলাম এ মর্মে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে যে, এ আইনটি যদিও হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষা আইন মনে করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার এক নয়।
শুক্রবার বিকালে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজতের শীর্ষ এই দুই নেতা এমন মন্তব্য করেছেন।
এই দুই নেতা বলেন, হিজড়া বলতে বোঝানো হয় এমন মানুষকে, জন্মগতভাবে যার মধ্যে পুরুষ ও নারী উভয়ের চিহ্ন বিদ্যমান থাকে। পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি হলো, জন্মগতভাবে সে পুরুষ কিংবা নারী। কিন্তু কোনো কারণে সে নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে করে। যেমন- কোনো পুরুষ নিজেকে নারী মনে করল অথবা কোনো নারী নিজেকে পুরুষ মনে করল; আর এর ভিত্তিতেই তাকে ভিন্ন লিঙ্গের ঘোষণা করা ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি।
বিবৃতিতে আমিরে হেফাজত ও মহাসচিব আরও বলেন, বলাবাহুল্য যে, শুধু মনে করার কারণে কারো লিঙ্গ পরিবর্তন হতে পারে না। এমনকি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেও লিঙ্গ পরিবর্তন হয় না। এভাবে না কোনো পুরুষ নারী হয়ে যায়, আর না কোনো নারী পুরুষ হয়ে যায়। এরপরও যদি কেউ এমনটি মনে করে বা এর স্বীকৃতি দেয় তাহলে সে মূলত আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন সাধন করল; যা স্পষ্ট হারাম ও মস্তবড় পাপ। এর চেয়েও ভয়াবহ বিষয় হলো, এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেওয়া শরিয়ত এবং কুরআন-সুন্নাহর বিকৃতি সাধনের মতো কুফরি গুনাহ।
তারা বলেন, হিজড়া তথা খুনছার বিষয়ে শরিয়তের সুস্পষ্ট বিধান ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবগুলোতে উল্লেখ রয়েছে। সে বিধান বাস্তবায়ন করলেই তাদের অধিকারের প্রকৃত সুরক্ষা হবে। পক্ষান্তরে তা না করে ট্রান্সজেন্ডার নামে যে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে তা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে বিকৃতি ও আল্লাহর শরিয়ত পরিবর্তনের মতো কুফরি গুনাহ। এর মাধ্যমে ইসলামের বিয়ে, তালাক, বংশ পরিচয়, পর্দা ও মিরাস-উত্তরাধিকারসহ নারী-পুরুষ সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামের সব বিধানের পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটবে। আর সমকামিতা ও ব্যভিচারের মতো ঘৃণ্য ও মহাপাপগুলো আইনি বৈধতা পাবে। যার ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে তেমনি আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি ও শরিয়তের মধ্যে বিকৃতি ও পরিবর্তনের মতো গুনায় লিপ্ত হওয়ার দরুন তারা আল্লাহর গজব ও লানতেরও শিকার হবে।
ওই দুই হেফাজত নেতা বলেন, আইনটি শুধু ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থিই নয়; বরং মানব জাতির স্বভাবজাত রুচি-প্রকৃতি বিরোধীও বটে! তাই যেকোনো ধর্মের সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি ও রুচিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি এর সমর্থন করতে পারে না।