ঢাকা-১ আসনে লাঙ্গলের জোয়ার
সালমা ইসলামের মাঝেই আধুনিক দোহার-নবাবগঞ্জের স্বপ্ন
মাহমুদুল হাসান নয়ন ও জাহিদ হাসান, নবাবগঞ্জ থেকে
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:১৬ এএম
জমে উঠেছে ঢাকা-১ আসনের নির্বাচন। এই এলাকার মানুষ বদলে যাওয়া আধুনিক দোহার-নবাবগঞ্জ দেখার অপেক্ষায়। তারা চান ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে এই এলাকা। তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ থাকবে শান্তিতে-নিরাপদে, চলাচল করবে নির্বিঘ্নে। গ্রামীণ জনপদের সড়কও হবে শহরের আদলে। এজন্য আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা আস্থা রাখতে চান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের লাঙ্গল প্রতীকে। অতীতের মতো তিনি আগামী দিনেও সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করবেন, এটাই বিশ্বাস ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটির জনগণের। বুধবার নির্বাচনি এলাকাটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সাধারণ মানুষ বলছেন, বিপদে-আপদে সব সময় তারা সালমা ইসলামকে পাশে পেয়েছেন। যে কোনো সমস্যা নিয়ে তার কাছে গেলে তিনি সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তিনি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও এমপি হলেও জনগণের থেকে কখনো দূরে সরে যাননি। বরং পদ-পদবি তাকে মানুষের আরও কাছে এনেছে। সর্বস্তরের মানুষকে তিনি আপন করে নিয়েছেন। জনগণ যখনই চেয়েছে তাকে পেয়েছে।
রোববার সকালে কথা হয় নবাবগঞ্জের বক্সনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মমতা বেগমের (৫৬) সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সালমা ইসলাম আপা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী ভোট চাইতে আসেনি। আপা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কথা শুনেছেন, ভোট চেয়েছেন, সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন। আমার পরিবারে ছয়জন ভোটার। সুখে-দুঃখে সব সময় যেহেতু সালমা ইসলামকেই পাশে পাই, এবারও তার লাঙ্গল মার্কায়ই ভোট দেব।
বক্সনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মো. কাজল (৪৫) বলেন, ১৪ বছর আগে আমার স্বামী মারা যান। এরপর তিন মেয়েকে নিয়ে কঠিন সময় পার করছি। নির্বাচনের পরের কথা পরে, ভোটের আগেও সালমা ইসলাম ছাড়া কোনো প্রার্থী আমাদের বাড়ির কাছে আসেনি। এজন্য কে কী বলল তাতে ভয় পাই না। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। সালমা আপাকেই ভোট দেব। তিনি আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট করে দিয়েছেন। ঈদে সেমাই-চিনি দেন। শীতে কাপড় দেন। নির্বাচনের আগেও যেমন তাকে পাই, পরেও তেমন পাই। এলাকাটা পরিবর্তন করে দিয়েছেন তিনি।
দুপুরের দিকে যন্ত্রাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর রথখোলা কালী মন্দির এলাকায় কথা হয় হিন্দু জেলে সম্প্রদায়ের সঙ্গে। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সত্তরোর্ধ্ব আনন্দ হালদার যুগান্তরকে বলেন, সালমা আপা তিনবার এমপি হয়েছেন। আমরা দুইবার তাকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়েছি। এবারও আমার পরিবারের ১২ জন ভোটারের সবাই লাঙ্গলেই ভোট দেব। কারণ তিনি আমাদের খোঁজখবর রাখছেন, কেউ তার কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরেননি। সালমা আপার স্বামী যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান (নুরুল ইসলাম) বেঁচে থাকতে আমাদের মন্দির পরিদর্শনে এসে লাখ টাকার সহায়তা দিয়েছিলেন। এবার আপার কাছে আরেকটা মন্দির করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। আরও বলেছি, মন্দিরসংলগ্ন ইছামতি নদীর ওপর একটা স্লুইসগেট করে দিতে। আপা বলেছেন, তিনি অতীতের মতো আমাদের দাবি পূরণে সচেষ্ট থাকবেন।
এই এলাকার কালাচাঁদ হালদার (৭৭) নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, আরেক প্রার্থীর কাছে আমাদের বেশকিছু দাবি-দাওয়া থাকলেও তা পূরণ করেনি। এবার মানুষ ভয়ে চুপ থাকলেও লাঙ্গল প্রতীকেই ভোট দেবে। আমাদের চাওয়া বিপদে-আপদে যেন সালমা আপাকে আগের মতো পাশে পাই।
কৈলাইল টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কথা হয় প্রবাসী রতন রাজবংশী পোদ্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। এবার দেশে থাকায় প্রথম ভোট দেব। তরুণ বয়স থেকেই শুনেছি সালমা ইসলাম ভালো মানুষ। তাই আমার পরিবারে ৮ জন ভোটার সবাই তাকেই ভোট দেব।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী কানু দে (৭৫) বলেন, জীবনে প্রায় ১০টার মতো জাতীয় নির্বাচন দেখছি। কিন্তু দোহার-নবাবগঞ্জে অন্যান্য এমপির চেয়ে সালমা ইসলাম বেশি সহযোগিতা করছেন। যেমন-শীতে গরম কাপড় দেওয়া, পূজায় উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এছাড়া এমপি থাকাকালে চাল, ডাল, সেমাই, চিনি ও আটাসহ নিত্যপণ্যের সহায়তা দিয়েছেন। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ভোটই পাবেন।
জয় গোপাল বাড়ৈ (৭০) বলেন, সালমা ইসলাম তেলেঙ্গনা কৈলাইলের মানুষের জন্য ক্লিনিক করেছেন। ভাঙাভিটা, কাঁচা রাস্তা নিজের টাকায় পাকা করেছেন। প্রতি ঈদে উপহার ও খাদ্যসামগ্রী দেন। করোনার সময় কমবেশি সবাইকে সাহায্য করেছেন। সাধারণ মানুষ তার কাছে ঋণী। তাই তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।
তরুণ ভোটার আবু কাওসার বলেন, এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় ঢাকা-১ আসনের দোহার-নবাবগঞ্জ এলাকায় সালমা ইসলাম প্রতিদিন মাঠ-ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের বেশি আকৃষ্ট করছেন। তার মতো অন্য প্রার্থীদের প্রচারণার ক্ষেত্রে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবশ্যই সালমা ইসলামের লাঙ্গল মার্কা বিপুল ভোটে জিতবে। এবার তার বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
কৈলাইল ইউনিয়নের সায়মা খাতুন বলেন, ২৫ বছর আগে বিয়ে হয়ে এই এলাকায় এসেছি। বিয়ের পরপর যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাহেবের নাম শুনেছি। তিনি মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী সালমা ইসলাম মানুষের মন জয় করছেন। এলাকার উন্নয়নে তার অবদান অনেক। আমার পরিবারে ছয়টি ভোট আছে, সবগুলো লাঙ্গলে দেব।
মাছ বিক্রেতা তপন হালদার (৫০) বলেন, তিনি মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছেন। এই এলাকার মানুষ এমপি হিসেবে তাকেই বেছে নেবে। তিনি কখনো আমাদের ছেড়ে যাননি। আমরাও তার পাশে আছি।
গৃহিণী বকুলী হালদার বলেন, সালমা ইসলামের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হলো তিনি মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। তিনি সব এলাকায় যাচ্ছেন, ভোট চাচ্ছেন। মানুষের কথা শুনছেন। বিপদে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এমন মানুষকেই জনগণ এমপি হিসেবে চান।
বারোয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুটপাতের ব্যবসায়ী নিমাই হালদার বলেন, সালমা ইসলামকে ঘিরে আমাদের অনেক স্বপ্ন। তার কাছে বলেছি, ইছামতি নদীতে স্লুইসগেট চাই।
১২নং আগলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জহুর হোসেন (৭৯) বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে সালমা ইসলাম জিতে যাবেন।