মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়, শৈত্যপ্রবাহের আভাস
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৬ এএম
পঞ্চগড়ে চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস; যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সর্বনিম্ন ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে তাপমাত্রা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আভাস বলছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।
এর আগে মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা) রেকর্ড করা হয় ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। রাতভর বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে। সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে তীব্র শীত অনুভূত হয়।
বুধবার ভোর থেকেও ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল গোটা এলাকা। কুয়াশা আর বাতাসের কারণে স্থবিরতা দেখা দেয় জনজীবনে। তবে সকাল ৮টার পর দেখা মেলে সূর্যের। সূর্যের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ায় কিছুটা কমে আসে জনদুর্ভোগ।
তবে জীবিকার তাগিদে সকালে কাজে যোগ দেওয়া খেটেখাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষি শ্রমিকরা। শীতের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রিকশা-ভ্যানে উঠতে চায় না। কনকনে শীতের কারণে দৈনন্দিন আয় কমে গেছে এসব শ্রমজীবী মানুষের।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার আবরণে এ জেলা। কুয়াশার সঙ্গে ঝরছে হিম শিশির। তার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। এতে করে কুয়াশা ঝরা ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকালে বিভিন্ন যানবাহনগুলোকে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে।
এদিকে সন্ধ্যার পর তীব্র শীত বইলেও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ও নির্বাচনি সভার মধ্য দিয়ে শীতে ঘাম ঝরাচ্ছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। স্থানীয়রা জানান, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়েছে আবার।
গ্রামীণ নারীরা জানান, বৃষ্টির মতো শিশির ঝরছে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। ঘরে মেঝে, আসবাবপত্র, দরজা ও বিছানা পর্যন্ত ঠাণ্ডায় বরফ হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। সকালে কাজ করতে খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
ভ্যানচালকরা জানান, আবার ঘন কুয়াশা ভাই। কুয়াশার কারণে ভ্যান চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। রোদ উঠলে শীত থাকলেও আয় বাড়ে; কিন্তু ঘন কুয়াশা থাকলে কেউ সহজেই ভ্যানে চড়তে চান না। এ কারণে কামাই কম হয় কুয়াশা থাকলে।
চা শ্রমিকরা জানান, আজও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। এ সময়টা চা পাতার কাজ কমে গেছে। দুদিন ধরে আবার কুয়াশা। তবে কি আর করব, কাজে বেরিয়েছি। একই কথা বলেন পাথর শ্রমিকরা। তারাও জীবিকার তাগিদে কাজে বেরিয়ে পড়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, ক্রনিক শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার মতো নানান শীতজনিত রোগ বেড়েছে। এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে শিশু বয়স্করা। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে আউটডোরে ঠাণ্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে পচা-বাসি খাবার পরিহার ও উষ্ণতা বজায় রাখতে হবে।
তেঁতুলিয়ার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, বুধবার সকাল ৯টায় চলতি শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সর্বনিম্ন ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে থাকলে এবং তা কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা স্থায়ী হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তবে সকাল ৮টার মধ্যে সূর্যের দেখা মিলেছে।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, পঞ্চগড় শীতপ্রবণ জেলা। এখানে প্রায় দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। শীত মোকাবেলায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে থেকে প্রায় ২৬ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৃত গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের মধ্যে এসব শীতবস্ত্র উপহার হিসেবে এসব শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে শীতবস্ত্র চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই আরও শীতবস্ত্র পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগেও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।