নিখোঁজ ২ বিএনপি নেতা বাড়ি ফিরেছেন, মুখ খুলবেন ভোটের পর
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৫ পিএম
নিখোঁজ বগুড়ার কাহালু উপজেলা বিএনপির দুই নেতা আনোয়ার হোসেন হৃদয় ও দেলোয়ার হোসেন বাড়িতে ফিরেছেন। তবে গত ১৪ দিন তারা কোথায় ছিলেন, সেই ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
বৃহস্পতিবার সকালে হৃদয় ও রাতে দেলোয়ার নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে অন্যত্র চলে গেছেন।
কাহালু থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, তারা শুধু হৃদয়ের বাড়ি ফেরার কথা শুনেছেন। শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা জানান, তাকে থানায় আসতে বলা হয়েছিল; কিন্তু আসেননি। পরিবারের লোকজন বলছেন, তারা তাদের কাছে নিখোঁজ প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেন জানান, তুলে নিয়ে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গত বুধবার রাতে দুই বিএনপি নেতাকে ঢাকা থেকে বগুড়ার বাসে তুলে দিয়েছেন। এর আগে তাদের কাছ থেকে ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টে রিট না হলে তাদের ফিরে পাওয়া কঠিন হতো। ওরা দুজন পুলিশি হয়রানির ভয়ে বাড়ি থেকে সরে রয়েছেন।
দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন জানান, আব্বুর সঙ্গে বুধবার রাতে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন। শুধু আম্মুর সঙ্গে দেখা করে তিনি অন্যত্র চলে গেছেন।
জানা গেছে, বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা ও চারবারের সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা গত ১১ ডিসেম্বর গণসংযোগ করতে কাহালুর তিনদীঘি বাজার এলাকায় যান। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর করেন। এতে ডা. মোল্লাসহ তিনজন আহত হন। এ ব্যাপারে তিনি কাহালু থানায় সাবেক এমপি মোশারফ হোসেনকে হুকুমের আসামি করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৪২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর তিন দিনের মাথায় গত ১৪ ডিসেম্বর বিকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বগুড়ার শেরপুরের পল্লী উন্নয়ন একাডেমি থেকে কাহালু উপজেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন হৃদয় ও রাত ৯টার দিকে দুপচাঁচিয়ার সিও অফিস মোড় এলাকা থেকে বীরকেদার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া যায়। পরিবার থেকে শেরপুর ও দুপচাঁচিয়া থানায় জিডি করা হয়। তারা দাবি করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জিয়াউল হক মোল্লার ইন্ধনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে গেছেন। তবে বগুড়ার শেরপুর ও কাহালু থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দুই বিএনপি নেতাকে গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে হৃদয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আঁখি বেগম বগুড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্বামীকে ফিরে চান। তবে এলাকার জনগণ মন্তব্য করেন, বগুড়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন ও অন্যরা সরকারকে বিব্রত করতে এ অপহরণ নাটক করেছেন।
এরপরও তাদের সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা গত ২৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। পর দিন হাইকোর্টের বেঞ্চ আগামী ৪ জানুয়ারির মধ্যে দুই বিএনপি নেতা নিখোঁজের ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকে নির্দেশ দেন। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ ওই আদেশ দেন। ওই রাতেই নিখোঁজ বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন হৃদয় ও দেলোয়ার হোসেনের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বগুড়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেন জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হৃদয় ও দেলোয়ার হোসেনকে তুলে নিয়ে যায়; যা তাদের পরিবার থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করা হয়। তিনি দাবি করেন, হাইকোর্টে রিট হওয়ায় তুলে নিয়ে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বুধবার রাতে তাদের বগুড়াগামী বাসে তুলে দেন।
দুই বিএনপি নেতা নিখোঁজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে হাইকোর্টে রিটসহ অন্যান্য সব খরচ তিনি বহন করেছেন। মোশারফ আরও বলেন, ছেড়ে দেওয়ার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের বাঁচাতে তাদের (নিখোঁজ) শিখিয়ে দেওয়া অডিও এবং ভিডিও বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়েছেন।