Logo
Logo
×

সারাদেশ

ম্যানহোলে আ.লীগ কর্মীর লাশ: সিসি ক্যামেরা ‘নষ্ট’ থাকায় রহস্য

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩০ পিএম

ম্যানহোলে আ.লীগ কর্মীর লাশ: সিসি ক্যামেরা ‘নষ্ট’ থাকায় রহস্য

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের ম্যানহোল থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী নয়নাল উদ্দিনের লাশ পাওয়ার ঘটনায় রহস্য দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ‘নষ্ট’ থাকায় বিষয়টি নিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্টদের মনে সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কোনো কথাও বলছেন না এমপি ফারুক। মঙ্গলবার ও বুধবার তাকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ১০তলা একটি ভবন রয়েছে। ভবনটির নাম থিম ওমর প্লাজা। এ ভবনের পাশেই তার একতলা রাজনৈতিক কার্যালয়। থিম ওমর প্লাজা ও রাজনৈতিক কার্যালয়ের মাঝামাঝি স্থানে ম্যানহোলে পড়ে ছিল দু-তিন দিন আগে মারা যাওয়া আওয়ামী লীগ কর্মী নয়নালের অর্ধগলিত লাশ।

নয়নালের স্বজনরা ধারণা করছেন, নয়নালকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল। তাই মঙ্গলবার সকালে লাশ উদ্ধারের পর রাতে থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। যদিও মামলায় আসামি হিসাবে কারও নাম উল্লেখ নেই।

পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পুরো এলাকাটিই সীমানা প্রাচীরে ঘেরা। নিরাপত্তা প্রহরীদের এড়িয়ে সেখানে বাইরে থেকে কেউ ঢোকার সুযোগ নেই। এ রকম একটি স্থানে নয়নালের মৃত্যু ঘিরে বড় রহস্য দেখা দিয়েছে।

রহস্য আরও বেড়েছে ঘটনাস্থলে থাকা ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ না পাওয়ার কারণে। তদন্তসংশ্লিষ্ট ওই সূত্র জানায়, পুরো এলাকাটিই সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে। রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশ দিয়ে ওই ম্যানহোলের দিকে কাউকে যেতে হলে তাকে একাধিক সিসি ক্যামেরার ধরা পড়তে হবে। তবে রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের সিসি ক্যামেরাটিই নাকি নষ্ট। থিম ওমর প্লাজার সিসি ক্যামেরার দায়িত্বে থাকা কর্মচারী মো. শান্ত পুলিশকে এ কথা জানিয়েছেন।

তবে শান্ত থিম ওমর প্লাজার নিচতলার গ্যারেজের কাছের একটি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে সরবরাহ করেছেন। রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের প্রধান ফটক দিয়ে কেউ ভেতরে না ঢুকে থিম ওমর প্লাজার গ্যারেজের অংশ দিয়ে কেউ ভেতরে ঢুকলে এ ক্যামেরায় দেখা যাবে। রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলেই তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে যেত। কিন্তু সেই ক্যামেরার ফুটেজই পাওয়া যায়নি।

নিহত নয়নালের ভাগ্নে সোহেল রানা বলেন, যে ম্যানহোলে লাশ পাওয়া গেছে তার অর্ধেক অংশে ঢাকনা ছিল, অর্ধেক অংশ ছিল ফাঁকা। ম্যানহোলের পাশের দুই শৌচাগার এখনো ব্যবহার হয়। একটা লাশ পচে গেল, কেউ দেখল না এটা খুব রহস্যজনক। তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। তাই তারা মনে করেন, নয়নালকে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, যে স্থানে ম্যানহোল সেখানে বাইরের কেউ লাশ এনে গুম করতে পারবে না। সীমানা প্রাচীর টপকেও কেউ সেখানে লাশ ফেলতে পারবে না। কারণ, ওই স্থানটি সীমানা প্রাচীর ও থিম ওমর প্লাজার দেওয়ালের সঙ্গে মোটা রডের নেট দিয়ে ঢাকা রয়েছে। ম্যানহোলের কাছে যেতে হলেও একটি রডের গেট অতিক্রম করতে হবে। তাই নয়নালের মৃত্যুর পেছনে বড় রহস্য আছে বলে তারাও মনে করেন।

নয়নালের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের আগের দিন ওই স্থানে বি-চিং পাউডার ছিটানো নিয়েও রহস্য দেখা দিয়েছে। থিম ওমর প্লাজার সামনের এক ব্যবসায়ী জানান, আশপাশের ব্যবসায়ীরা ওই শৌচাগার দুটি ব্যবহার করেন। আগে কখনো তিনি সেখানে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো দেখেননি। তবে লাশ উদ্ধারের আগের দিন সেখানে প্রচুর ব্লিচিং পাউডার ছিটানো দেখেন। ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর সময়ও কেউ লাশ দেখেনি, এটাও অবিশ্বাস্য। এখানে নয়নালের লাশ পড়ে থাকা তাদের কাছেও রহস্য মনে হচ্ছে।

আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, ওমর ফারুক চৌধুরী এবারো রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় এ রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রতিদিনই অসংখ্য নেতাকর্মীর আগমন ঘটে। রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনের ফাঁকা জায়গাটিতে বসিয়েই তিন বেলা নেতাকর্মীদের বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছে। কেউ ৩ দিন ধরে লাশ দেখেননি এটাও তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান বলেন, এখনো আমরা সেভাবে তদন্ত শুরু করতে পারিনি। একটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছি। ৭ দিনের এই ফুটেজ এখনো দেখা হয়নি। তবে যে ক্যামেরাটি গুরুত্বপূর্ণ, সেটিরই ফুটেজ পাইনি। ওই ক্যামেরা নাকি নষ্ট।

তিনি বলেন, লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে নয়নালের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।

বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নয়নালের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নয়নাল আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। তার বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার শ্যামপুর থান্দারপাড়ায়। নয়নালের স্ত্রী-সন্তান ছিল না। শুধু রাতটুকুই তিনি বাড়িতে থাকতেন। সকালে শহরে এসে সারা দিন থাকতেন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও নেতাদের সঙ্গে। নেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুপুরের খাবার খেতেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন ভবনেও নয়নালের যাতায়াত ছিল নিয়মিত। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি ১০-১২ বছর ধরে প্রতি মাসেই হাতখরচের জন্য নয়নালকে টাকা দিতেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম