Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিসিএসে সুপারিশ পাওয়া রুবেলের জীবনের গতি থেমে গেল সড়কে

Icon

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম

বিসিএসে সুপারিশ পাওয়া রুবেলের জীবনের গতি থেমে গেল সড়কে

রুবেল পারভেজ একটি আস্থা ও ভরসার নাম। একটি পরিবারের ছায়া হয়ে ছাত্রজীবন থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। স্ত্রী এবং দুই বছরের শিশুকন্যার ভবিষ্যৎ গড়তে পরিশ্রমের কমতি ছিল না তার। ঘাতক বাস তাকে আর এগোতে দিল না। তিনি এখন তার পরিবারের সারা জীবনের কান্না হয়েই রইলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে অফিসে যাওয়ার পথে ঢাকা জেলার ধামরাই বাসস্ট্যান্ডে সেলফি পরিবহণ বাসের চাপায় প্রাণ হারান তিনি। রুবেল মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শী ইউনিয়নের বন্দে কাওয়ালজানী গ্রামের মৃত মোকাদ্দেসের ছেলে। রুবেল ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এবং ৪২তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।

জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান রুবেল। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে বড়। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। লেখাপড়ায় বরাবরই প্রথম। প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। বাবার সঙ্গে নৌকা চালানো এবং দিনমজুরের কাজ করে লেখাপড়া চালিয়েছেন।

২০০৭ সালে উপজেলার বন্দে কাওয়ালজানী খাদেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সুনামের সঙ্গে এসএসসি পাশ করে ২০০৯ সালে সাভার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন। ছাত্রজীবনেই দায়িত্ব নেন পুরো পরিবারের। বাবার মৃত্যুর পর নিজে টিউশনি করে ছোট ভাইদের লেখাপড়া এবং সংসার খরচ জোগান। চাকরি শুরু করেন মার্কেন্টাইল ব্যাংক মানিকগঞ্জের ঝিটকা শাখায়। এরই মধ্যে অংশ নেন ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায়। সেখানে তিনি শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। প্রশাসন ক্যাডারের আশায় ৪২তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন।

রুবেল পরিবার নিয়ে ধামরাইয়ে ভাড়া বাসায় থেকে চাকরি করতেন। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। ধামরাই বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ সেলফি পরিবহণ নামে একটি বাস অপেক্ষমাণ যাত্রীদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই রুবেল মারা যান।

রুবেলের মৃত্যুর খবর তার গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তার বৃদ্ধ মা কুলসুম বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। রুবেলের স্ত্রী ফারজানা আফরিন বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। শিশুকন্যাকে বুকে জড়িয়ে শুধু বিলাপ করছেন আর বলছেন, তোকে নিয়ে আমি কোথায় যাব?

বাদ আসর বন্দে কাওয়ালজানী খাদেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

ওয়ার্শী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুব আলম মল্লিক বলেন, রুবেল পারভেজের মৃত্যুতে আমাদের ইউনিয়নের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। রুবেল এ ইউনিয়নের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।  

উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর্জা শামীমা আক্তার শিফা বলেন, রুবেল আমাদের গ্রামের গর্ব। সে প্রশাসন ক্যাডারে ভাইভা দিয়ে এসেছে। হঠাৎ করে জানতে পারলাম, সড়ক দুর্ঘটনায় রুবেলের মৃত্যু হয়েছে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমি স্বাভাবিক হতে পারছি না। 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম