হেভিওয়েট স্বতন্ত্রদের নিয়ে টেনশনে নৌকার প্রার্থীরা
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০৮ এএম
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এখন ‘হেভিওয়েট স্বতন্ত্র’ প্রার্থীদের নিয়ে টেনশনে রয়েছেন। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিদ্রোহীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। বাকি ৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। এদিকে কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছেন। আবার কয়েকটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় তাদের অনেকে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কয়েকজন বৃহস্পতিবার আপিলের জন্য আবেদনও করেছেন।
চট্টগ্রামের যেসব আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন, এসবের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৮ (চাঁন্দগাঁও-বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। আওয়ামী লীগ ভোটের দিন ভোটার টানতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখার কৌশল নেয়। তবে ক্ষমতাসীন দলটির ভেতরেই নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দলের মনোনয়ন পাওয়া অনেকেই চান স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া হোক। কোনো কোনো আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৪ দলীয় জোট ও মিত্রদের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এ আসন থেকে সাতবার নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তার ছেলে মাহবুব রহমান রুহেল। আসনটিতে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এখন তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ-সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনের দৌড়ে আছেন একই দলের আবু তৈয়ব। তবে আওয়ামী লীগের দুই শক্ত প্রার্থীর মাথাব্যথা হচ্ছে আসনটির বর্তমান সংসদ-সদস্য বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল তরিকত ফেডারেশনকে এবারও আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও আওয়ামী লীগঘেঁষা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারীও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ-সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছেন সাবেক মেয়র মনজুর আলম। দীর্ঘদিন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন এবং দানশীল ব্যক্তি হিসাবে মনজুর আলমের বেশ সুনাম রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে বর্তমান সংসদ-সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ লতিফ ও কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনকে ঘিরে ভোটের আগেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নগর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ দুই প্রার্থীকে ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জিয়াউল হক সুমনের পক্ষে প্রকাশ্য সভায় অংশ নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ-সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ অন্য নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম।
একইভাবে চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বর্তমান সংসদ-সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী বা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন স্বাচিপ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতলেব। দুজনই আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসাবে পরিচিত। বাছাইয়ে তাদের দুজনেরই প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আপিল করার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন।