আমি যদি বলি ৫ মিনিটে বিএনপির সব নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা হবে: শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০০ পিএম
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও এমপি একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মধুর হবে। শেখ হাসিনাকে টলানো এত সহজ না। জাতির পিতার সঙ্গে তার কন্যার একটা ডিফারেন্স আছে। জাতির পিতা সবাইকে বিশ্বাস করতেন আর সেই সুযোগ নিত বিশ্বাসঘাতকরা; কিন্তু জাতির পিতার কন্যা বিশ্বাস ঘাতকদের চিনে রেখেছেন। তার ওপর আল্লাহর রহমত আছে। গত দুই বছর ধরে শুনছি সরকার পড়ে যাবে; ক্ষমতায় আসছি এসব কিচ্ছু হবে না। নির্বাচন হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে।
তিনি বলেন, যারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করাবে তারা কিন্তু আড়ালেই থাকবে। যারা করবে তারা ফেঁসে যাবে। আমাদের এলাকার পাগলদেরও আমরা চিনি। আমি যদি বলি ৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা হবে। তখন দোষ কার হবে, আমার হবে। যারা বাইরে থেকে নির্দেশ পেয়ে অরাজকতা করছে তারা কিন্তু ছাড় পাবে না। এবার ক্ষমতায় আসলে দুটি জিনিস ছাড় দেওয়া হবে না। একটা মানি লন্ডারিং আর আরেকটা দুর্নীতি।
মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীলসহ সিনিয়র নেতারা।
শামীম ওসমান বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে ১০০ পার্সেন্ট ফেয়ার। কেউ ঘাড়ও ঘোরাতে পারবে না। তবে যারা নকল করে পাশ করে তাদের জন্য এটি দুঃসংবাদ হলেও আমাদের জন্য এটা সুখবর। কারণ আমরা সারা বছর রাজপথে থাকি, পড়ালেখা করি।
তিনি আরও বলেন, সামনের ১৫-২০ দিন খুবই ক্রুসিয়াল। এ সময়টায় দেশব্যাপী সহিংসতার চেষ্টা করা হবে, বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চেষ্টা করা হবে। কিন্তু সবাই সতর্ক থাকলে ওরা কিছুই করতে পারবে না।
শামীম ওসমান বলেন, আমি একটা মেসেজ দিতে চাই। এত উন্নয়ন হয়েছে, এ রাস্তা দিয়ে কী শুধু আওয়ামী লীগ চলবে? বিএনপির ছেলেরাও চলাফেরা করবে, জামায়াতের ছেলেরা চলবে। এই রাস্তার পাশে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, মেডিকেল কলেজ হবে। তার পাশে শেখ কামাল আইটি ইনস্টিটিউট হবে। কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমি শুধু ফতুল্লা এলাকায় ছয়শ কোটি টাকার রাস্তা করেছি। আমরা ৫৮টি বড় বড় বিল্ডিং করে দিয়েছি স্কুলের।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের একজন এমপি ছিলেন। এক সময় জাতীয় পার্টি করতেন, তারপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, আবারো আওয়ামী লীগ হয়ে বিএনপিতে। এখন নাকি নতুন দলে ভিড়তে চাচ্ছে। তৃণমূলে, বিএনএফে নক করছেন এখন। এত বড় পল্টিবাজ, তাই তাকে আর কেউ নিতে চাচ্ছে না। তার আমলে আমাদের সুন্দর আলী ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বিএনপির তৈমূর সাহেবের ছোট ভাই, কোনো দল করতেন না। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ১২ জন লোককে মারা হয়েছে। যারা মানবাধিকারের কথা বলে, আমাদের নজরুল ইসলাম সুইটকে জেলখানা থেকে রিমান্ডের নাম করে নিয়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এর চেয়ে বড় আইনের ধর্ষক হতে পারে না। এখন উনি নতুন নাটক করছেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কি দেন নাই, আমার ব্যাপার না। মনোনয়নপত্র জমা না হওয়া পর্যন্ত তা বাতিল করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এটা স্ট্যান্টবাজি হচ্ছে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমরা ক্ষমতায়। আমি ২০১৪ সালে এমপি হয়েছি। জাতির পিতার কন্যা বলেছে কোনো প্রতিহিংসা নয়। শয়তানের কাজ শয়তানি করা। আমরা ওদের মতো হবো না। কষ্ট হয়েছে, বুকে পাথর চাপা দেওয়া আছে। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ ছিল না যখন তৈমূর ভাই, সিরাজ ভাই ও কালাম ভাইয়েরা দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আমি পাশ করার পর বিএনপির সদ্য সাবেক এমপি সিরাজ ভাইকে সালাম করেছি। এটা ছিল নারায়ণগঞ্জের কালচার। সেই সময় কোনো সহিংসতা হয়নি। আমরা চেয়েছি সহবস্থানে থাকতে কিন্তু হঠাৎ নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে চেঞ্জ আসে। ডিজিটাল যুগে দেশে আঠারো কোটি ক্যামেরা আছে।
তিনি বলেন, রাজনীতির নামে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নারায়ণগঞ্জে কোথায় ছিল আমরা জানতাম। দেখতে চেয়েছিলাম শুধু কী করে। এই ভদ্রলোক (গিয়াসউদ্দিন) সভাপতি হওয়ার পর কাঁচপুরে ঘটনা ঘটিয়ে ওরা আড়াইহাজার যায়। সেখানে এক পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে মারতে দেখা গেল। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হতেই পারে। কিন্তু আমরা কি পশু হয়ে গেলাম? ঢাকায় একজন পুলিশকে নির্মমভাবে কোপানো হলো। এগুলো দেখেছি আমরা।
সাংবাদিকদের জাতির দ্বিতীয় পার্লামেন্ট বলে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, আমি নৌকার মনোনয়ন পেয়ে সর্বপ্রথম মনে করেছি আমাকে সাংবাদিকদের সঙ্গেই বসা উচিত। কারণ তারা জাতির দর্পণই নয়, দ্বিতীয় পার্লামেন্ট।
তিনি বলেন, এ সংবাদ সম্মেলন আমি করতাম না, যারা মারা গেছে তাদের দুই চারজনের বাসায় আমি গেছি ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করে, ভাই আপনি কি বিচার করবেন না? নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কোনো অসভ্যতা ছিল না। যখন তৈমূর আলম খন্দকার, কালাম ভাই ছিলেন এমনকি যখন কমান্ডার সিরাজ ভাই এমপি ছিলেন তখনো এমন ছিল না। নারায়ণগঞ্জে গত ১৪ বছরে কোনো সহিংসতা নেই। নারায়ণগঞ্জ ৪, ৫ আসনে অন্তত কিছু হয়নি। কারণ আমরা উন্নয়ন করে মানুষকে খুশি করতে চেষ্টা করেছি। শামীম ওসমান বলেন, আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাই, আমি মানুষ। যদি কোনো ভুল করে থাকি ক্ষমা করে দেবেন আপনারা। আমি চাই কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন মামলার আসামি না হয়। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যদি এক ঘণ্টার জন্যও শাস্তি পায় সেটা খারাপ। আমি পুলিশ প্রশাসনসহ সবাইকে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে অনুরোধ করি।