Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভূমিদস্যু টেম্পু হোসেনের হাতে আলাদিনের চেরাগ!

Icon

কায়েস আহমেদ সেলিম

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৩১ পিএম

ভূমিদস্যু টেম্পু হোসেনের হাতে আলাদিনের চেরাগ!

রূপগঞ্জ পূর্বাচল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে ভূমিদস্যু মোহাম্মদ হোসেন ওরফে টেম্পু হোসেন। নিরীহ লোকজনের জমি জবরদখল, জালজালিয়াতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির অভিযোগসহ নানাবিধ অপকর্মে জড়িত এই হোসেন।

রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়ন মুশুরী গ্রামের বাসিন্দারা তার নাম শুনলেই আতঙ্কে থাকেন। হোসেনের অপকর্মের শিকার ভুক্তভোগীরা মুখ খুললেই পড়েন মহাবিপদে। থানায় মামলা করেও বিপাকে পড়েন অনেকে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক বাণিজ্যসহ নানা আবাসন কোম্পানির হয়ে জোরজুলুম করে জমিদখলের বিস্তর অভিযোগ। তার রোষানল থেকে বাদ যায়নি এতিমখানার ওয়াকফ করা জমিও।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, রূপগঞ্জের হতদরিদ্র পরিবারে হোসেনের জন্ম। পিতা শামসুদ্দিন ব্যাপারী। অভাব-অনটনে সন্তানদের বেশিদূর লেখাপড়া করাতে পারেননি। পিতার অভাবের সংসারের হাল ধরতে এক সময় হোসেন ঢাকা থেকে নিষিদ্ধ করা টেম্পো (বেবি) চালিয়েছে। সেই থেকেই এলাকার লোক তাকে টেম্পু হোসেন নামেই চেনে এবং ডাকে।

এর মাঝে রূপগঞ্জে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির হয়ে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে এলাকায় মাস্তানি শুরু করে। ধীরে ধীরে হোসেন এসব আবাসন কোম্পানির মালিকদের সহায়তায় এলাকার বিভিন্ন নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর লোকচক্ষুর আড়ালে মাদক বিক্রি করে কিছু টাকা পুঁজি করেন। পরে একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের রূপগঞ্জ ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে যান। এই পদ পাওয়ার পর থেকে তার বেপরোয়া কাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

ওই নেতার নির্দেশে ও অর্থায়নে টেম্পু হোসেন শুরু করেন জমি কেনাবেচার ব্যবসা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে শুরু করেন জমিদখল। এলাকার নিরীহ দরিদ্র জমির মালিকদের টার্গেট করে হোসেন জোরপূর্বক জমি দখল ও জমি ভরাট শুরু করেন। নায়েব আলীর ছেলে ইসরাফিল টুকু, ভিংরাবোর সজীব, কাউসার, নবী হোসেনের ছেলে শাওন, মামা ইব্রাহিম, জয়নালকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে হোসেন বাহিনী।

পূর্বাচল রূপগঞ্জের জলাধার ধীরে ধীরে গিলতে থাকে হোসেন বাহিনী। হোসেন বাহিনী রাতের আঁধারে বালু ফেলে এলাকার নিরীহ দরিদ্র লোকের জমি দখল করে ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে সেই জমি আবার বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। এভাবে অবৈধ টাকায় আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং তার নিজ গ্রামের লোকজনের ধারণা হোসেনের হাতে আলাদিনের চেরাগ আছে নইলে এত অল্প সময়ে কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন। তার অবৈধ টাকা থেকে স্থানীয় আওয়ামী নেতা, থানা পুলিশসহ বিভিন্ন স্তরে মাসোহারা প্রদান করে। এর বিনিময়ে সব অপকর্ম হালাল করতে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় জমি দখল করে পাহারা দেয়। ফলে দিন দিন ভূমিদস্যু টেম্পু হোসেন হয়ে উঠছে শক্তিশালী।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে আরও দেখা যায়, নিজের সঙ্গে গানম্যান নিয়ে ঘুরছে মোহাম্মদ হোসেন। অপরিচিত কেউ এলাকায় জমি কিনতে চাইলে কিংবা দেখতে গেলেও মোহাম্মদ হোসেনের সাঙ্গপাঙ্গরা তাদের এক প্রকার জিম্মি করে ফেলে। তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই মামলা-হামলার শিকার হতে হয়।

ভুক্তভোগী রুহুল আমিন জানান, কিছুদিন আগে হোসেন তার দলবল নিয়ে জোরপূর্বক  স্থানীয়  মসজিদ ও এতিমখানার জায়গা দখলের চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী হোসেনের অপকর্মের প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন করেন, এরপরও মেলেনি কোনো সুরাহা।

প্রশাসন ম্যানেজ করে সরকার দলের ক্ষমতা খাটিয়ে প্রকাশ্যে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানারকমের অপকর্মের অভিযোগ এই মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সাবেক শিক্ষক আনিস বলেন, ‘নুন আনতে পান্তা ফুরাত আর এখন সে অস্ত্রশস্ত্র নিয়া বডিগার্ড লইয়া ঘুরে। সাধারণ মানুষের জমিদখল কইরা বেচাকিনি কইরা লাট বাহাদুর সাজে। এদের কারা অস্ত্রের লাইসেন্স আর বডিগার্ড দেয়। এগুলার কোনো নিতীমালা নাই। এই টাইপের হোসেনে পুরা রূপগঞ্জ সয়লাব। তাদের আইনের আওতায় এনে নাগাল টেনে ধরলে সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকবে।’

হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জের পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের হোসেন যুবরাজ বলেন, মাদক সন্ত্রাসীদের বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সদাতৎপরতায়, তারা বহু অপরাধীকে গ্রেফতার করেছেন। আরও কারও বিষয়ে অভিযোগ থাকলে আইনি ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করা হোসেনের দৌরাত্ম্য এখনই থামানোর দাবি এলাকাবাসীর।

আনীত অভিযোগ সম্পর্কে হোসেনকে বারবার কল ও ক্ষুদেবার্তা দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না, পরে তিনি কল ব্যাক করে বলেন, আনীত অভিযোগ মিথ্যা আর আমার শটগান লাইসেন্স করা, মাঝে মধ্যে শটগান সচল রাখতে গুলি ফুটাতে হয় তাই ফুটিয়েছি। আর আপনি আসেন সামনাসামনি কথা বলবোনে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম