বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না সাইফুলের
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫৭ এএম
সাইফুল আলম। ছবি: যুগান্তর
সাইফুল আলম (২৮)। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এর পর ২০২২ সালে এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট শাখায় সহকারী অফিসার (ক্যাশ) পদে যোগদান করেন।
চাকরিতে যোগদানের পর মা-বাবাকে নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল সাইফুলের। পরিবারের সদস্যরা তার জন্য পাত্রীও খোঁজাখুঁজি করছিলেন। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে পরিবারের পছন্দের কনেকে ঘরে তুলবে। কিন্তু তার পরিবারের এ স্বপ্ন আর কখনো পূরণ হবে না। কারণ সাইফুলের আর বিয়ের পিড়িতে বসা হবে না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভার আলমগীর কনভেনশন সেন্টারের অদূরে অটোরিকশা উল্টে গুরুতর আহত হয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন সাইফুল আলম।
ব্যাংকার সাইফুল আলমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, তারই সহকর্মী এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড নাজিরহাট শাখার সহকারী ম্যানেজার মো. আবু সায়েম।
তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো সাইফুল আলম অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ পথিমধ্যে তাকে বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি উল্টে সে গুরুতর আহত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন, যা ভাবতে খুবই কষ্ট হচ্ছে এবং তা মেনে নিতে পারছি না।
নিহত সাইফুল হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া এলাকার ইউনুসনগর গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের নুর মার্কেট এলাকার মোহাম্মদ শামিলের বাড়ির নুরুল আলমের ছেলে। তিনি চার ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। বড়ভাই শহিদুল আলম নগরীর কুলগাঁও সিটি করপোরেশন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক বলে জানা গেছে।
অটোরিকশা উল্টে সাইফুলের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। পাশাপাশি গর্ভধারিণী মা ও বাবা পুত্রশোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য শামসুল করিম নয়ন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে খন্দকিয়া বাজারস্থ নুর মার্কেট চত্বরে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয় বলে ওই ইউপি সদস্য জানান।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া ইজতেমা মাঠের সামনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই এক পরিবারের ৫ জনসহ ৭ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হন।
ঘটনার পর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানকে প্রধান করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায় ১০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি বাসচালক ও হেলপার।