স্কুল ড্রেস না পরায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে বিদ্যুতের তার দিয়ে পিটুনি
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম
ফরিদপুরের ভাঙ্গা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা জুতা ও ড্রেস পরে না আসায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে বিদ্যুতের তার দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির এসব শিক্ষার্থীকে পেটান প্রধান শিক্ষক মো. হায়দার হোসেন।
এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর বাবা প্যানেল মেয়র আইয়ুব শেখ বাদী হয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক, ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভাঙ্গা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্যানেল মেয়র মো. আইয়ুব আলী জানান, গত ১০ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাস্তা সংস্কারের কারণে রাস্তার পাশে অবৈধ জায়গায় থাকা পাইলট স্কুলের একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘর ভেঙে ফেলতে গেলে প্রধান শিক্ষক ভাঙতে বাধা প্রদান করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীর বাবা ভাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র তাকে জানান এটা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভাঙা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও প্যানেল মেয়রের বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জের ধরে আমার অসুস্থ (স্কিন এলার্জি) ছেলে স্কুলে জুতা না পরে আসার কারণ দেখালেও প্রধান শিক্ষক হায়দার হোসেন তাকেসহ আরও কয়েকজন ছাত্রকে মারধর করেন। পরে আমার স্ত্রীকেও প্রধান শিক্ষক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও খারাপ আচরণ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে বিরোধের কারণে আমার ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ছেলেকে বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় স্যারকে জানিয়েছি আমার ছেলে অসুস্থ, তাই জুতা ব্যবহারে করতে ডাক্তার নিষেধ করেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিম আলী জানায়, রোববার স্কুলে যাওয়ার পর তৃতীয় বেলের সময় হেড স্যার ক্লাস রুমে ঢুকে যারা জুতা পরে আসে নাই তাদের বাহিরে আসতে বলেন। তখন স্যার আমাকেসহ ৫০-৬০ জন ছাত্রকে বিদ্যুতের ক্যাবল দিয়ে পেটান। পরে আমি অসুস্থ হয়ে গেলে আম্মু জিজ্ঞেস করলে বলি আমাকে হেড স্যার মেরেছে। পরে আমি ভাঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসা নেই।
এছাড়া আহত অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানায়, কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ জন ছাত্রকে বিদ্যুতের তার দিয়ে মারধর করেছেন হেড স্যার। মাঝে মাঝেই হেড স্যার আমাদের মারধর করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা তানিয়া খানম জানান, আমার ছেলেটার স্কিন এলার্জি থাকার কারণে জুতা ব্যবহার করতে পারে না। জুতা পরলে ঘা হয়ে যায়। তাই আমার ছেলে স্কুলে জুতা পরে যায় না। এজন্য কি আমার ছেলের ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন করেছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার হোসেন বলেন, রোববার দুপুরে সব ক্লাসে গিয়ে দেখি ১০০ থেকে ১৫০ জন ছাত্ররা স্কুল ড্রেস ও জুতা পরে আসে নাই। আমি তাদের চিকন বিদ্যুতের তার দিয়ে শাসন করেছি। সোমবার সকালে ছাত্রদের বাসায় গিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেছি। অভিযোগ দেওয়ার মতো তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জালাল উদ্দীন বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। সোমবার স্কুলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করব।
এ বিষয়ে ভাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি স্কুল ড্রেস না পরার কারণে প্রধান শিক্ষক বাচ্চাদের শাসন করেছেন। তবে মারধরের বিষয়টি জানি না। যদি এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।