তিস্তার প্রবল স্রোতে ভেঙেছে স্বেচ্ছাশ্রমের গ্রামরক্ষা বাঁধ
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪২ পিএম
ভারতের উজান থেকে ভাটির দিকে ধেয়ে আসা তিস্তার প্রবল স্রোতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করা গ্রামরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বেশ কয়েকটি ঘর-বাড়ি ও গাছ-পালা ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গঙ্গাচড়া লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইছলি চর এলাকায় এই চিত্র দেখা যায়। এদিকে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নে কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটা কলেজ, দুইটা মাদ্রাসা আছে। স্থায়ী বাঁধ না হলে নদী ভাঙনে এগুলো হুমকির মুখে পড়বে। এখানকার ৬০ হেক্টর চাষাবাদের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত ভোররাত ৪টার দিকে বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ঘর-বাড়ি, গবাদিপশু, গাছ-পালা, পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়। তবে বাঁধ রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগও উঠেছে। আবার পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি পূর্ব ইছলি চরের লোকজনদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করেন। তার সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলার ইছলি চর, শংকরদাহ ও বিনবিনার চরের মামুদ মিয়া, আজগর আলী, নজিবর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, বাঁধ নির্মাণ না হলে এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু বিদ্যালয়ই নয়, এখানে বাঁধ না থাকায় চাষাবাদের জমিসহ আশপাশের প্রায় চল্লিশ থেকে ৫০ হাজার মানুষ বসতভিটা নিয়ে ভাঙন ভীতিতে রয়েছে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, শংকরদাহে বাঁধ নির্মাণ না করা হলে বিগত সময়ের মতো আবারো নবনির্মিত গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়ক হুমকিতে পড়বে। বিশেষ করে রংপুর ও লালমনিরহাটের সাথে মানুষের যাতায়াতের জন্য মহিপুর-কাকিনা সংযোগ সড়কটি বিচ্ছিন্ন হবে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি বলেন, আমরা জানি না কী কারণে শংকরদাহ থেকে বিনবিনা পর্যন্ত একটা বাঁধ করা হয়নি। অথচ বাঁধের জন্য কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। ডিও লেটার নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দিয়েছে। গত বন্যায় রংপুরের জেলা প্রশাসক এসে নিজে দেখে গেছেন। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ দেখছি না।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না নাহিদ বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত গ্রামরক্ষা বাঁধটি ভেঙে তেমন ক্ষতি হয়নি। দুই-তিনটি ঘর পানিতে ভেঙে গেছে। এছাড়া বন্যার পানিতে প্রায় ১০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, রংপুরের গঙ্গাচড়া এলাকার বাঁধ ভাঙার খবর পেয়েছেন তারা। এটি স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হওয়ায় মেরামতে কোনো বরাদ্দ নেই তাদের।