খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি, বহিষ্কার হতে পারেন সেই আ.লীগ নেতা
পটুয়াখালী ও বাউফল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২৮ পিএম
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি করা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার বহিষ্কার হতে পারেন।
ইতোমধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি আবদুল মান্নান।
এর আগে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুকে ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হোক’ লিখে একটি স্ট্যাটাস দেন আবদুল মোতালেব হাওলাদার। ওই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা বিষয়টির জন্য ধন্যবাদ জানালেও নিজ দলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
দলীয় সূত্র জানায়, আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। তার দলের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই এ ঘটনার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।
সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আসম ফিরোজকে কটূক্তি করে ‘আসল শয়তানের মূল’ বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন মোতালেব হাওলাদার। আ স ম ফিরোজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। নিজ দলের সভাপতিকে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট দেওয়ায় তখন তাকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরগুলোতে বিষয়টি নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
একটি সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আবদুল মোতালেব হাওলাদারের স্ট্যাটাসে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হতে পারে।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান বলেন, এর আগেও একাধিকবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজকে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট দেন মোতালেব হাওলাদার। এছাড়া বেশ কিছুদিন থেকে দলীয় শৃংখলাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন তিনি। এরপর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, মোতালেব হাওলাদার এখন দলের জন্য বিষফোঁড়া। তাকে বহিষ্কার করে আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় আগামী দিনে মাশুল গুনতে হবে। মোতালেব হাওলাদার এখন বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তাকে দলে রাখা বিপদজনক।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সদস্য শাহজাহান সিরাজ বলেন, মোতালেব হাওলাদারকে কোলে পিঠে করে নেতা বানিয়েছেন আমাদের অভিভাবক জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি। অথচ সেই অভিভাবকের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে দলে সংকট তৈরির চেষ্টা করেছেন তিনি। এখন আবার বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুরোধ করছেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা যেকোনোভাবে দল থেকে তাকে বহিষ্কার চাই।
অবশ্য খালেদা জিয়াকে নিয়ে নিজের বক্তব্যে অনড় আছি দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মোতালেব হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আমি সংগঠনবিরোধী কোনো বক্তব্য দিইনি। মানবিক দিক থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কথা বলেছি। এখন দল যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি তার সঙ্গেই একমত।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এ ধরনের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতে পারেন না। তাই তাকে সংগঠনের নিয়মানুযায়ী প্রাথমিকভাবে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।