ভারতের ‘গুরু পুজান’ পদকে ভূষিত গৌরীপুরের ডা. মুকতাদির
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৯ পিএম
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. একেএমএ মুকতাদির এবার ‘গুরু পুজান’ পদকে ভূষিত হন। দেশে গ্রামীণ এলাকায় চোখের চিকিৎসায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের বিলাসপুরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া অফথালমোজিক্যাল সোসাইটির সম্মেলনে শনিবার তিনি এ পদক গ্রহণ করেন।
ডা. একেএমএ মুকতাদির চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ অর্জন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া অফথালমোজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ড. হারবানশ লাল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশান অব কমিউনিটি অফথোলমোলজিস্ট অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ডা. এলসি মাদারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সঞ্জয় মেহতা, অফথ্যালমোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি এএইচএম এনায়েত হোসেন।
অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভুটান ও বিভিন্ন দেশের ৫ শতাধিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলেন প্রায় ৫০ জন চিকিৎসক।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডা. একেএমএ মুকতাদিরের বিনামূল্যে এ চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য তিনি ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর ভারতের তিরুচিরাপল্লীতে অ্যাসোসিয়েশন অব কমিউনিটি অফথ্যালমলোজি ইন ইন্ডিয়া আয়োজিত অনুষ্ঠানে লাইফ টাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, চক্ষু চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাওয়ার্ড, ২০০২ সালে লায়ন্স এফ্রিসিওয়ান অ্যাওয়ার্ড, ২০০৫ সালে এএফএও কর্তৃক ডিসটিংগোয়িং সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড, একেদাস অ্যান্ডওমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ২০১৫ সালে ভারতে গোল্ড মেডেলসহ দেশ ও বিদেশে ১৯টি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
তিনি ও তার সহধর্মিণী অধ্যাপিকা ডা. মাহমুদা খাতুনের সহযোগিতায় নিজ জন্মভূমিতে ২০০৪ সালে গড়ে তোলেন ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতাল। তারই অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তোলা হাসপাতালটিতেও ইতোমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ক্যাম্পে ৯ হাজার ৫৩৫ জনের অপারেশন সম্পন্ন করেন। এই হাসপাতালে ১৯ বছরে বিনামূল্যে চোখের জ্যোতি ফিরে পান ৮ হাজার ৭৯৮ জন।
এছাড়া ছানি অপারেশন ৩৭ হাজার ৬৬৮ জন, নালি অপারেশন ৪ হাজার ৯৭৩ জন, চোখের মাংস বৃদ্ধির অপারেশন ২ হাজার ৬২৮ জন, গ্লুকোমার ২ হাজার ৮৫২জন, নেত্রনালির অপারেশন ২ হাজার ৯৪৮ জন, চোখে পাথর সংযোজন ৬১২ জন, চোখের পাতার অপারেশন ৬৮৯ জন, গুটি অপারেশন ৬৯৭ জন, টিউমার অপারেশন ৯৬৭ জন, টেরা চোখ অপারেশন করা হয়েছে ১৫৮ জনের।
তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ একাডেমি অব অর্থালোমোলজি ও বাংলাদেশ ইউবিয়া সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। নিজগ্রামে তার পিতা আব্দুল ওয়াহেদ মেমোরিয়াল নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ডা. মাহমুদা খাতুন হাফেজিয়া মাদ্রাসার সভাপতিসহ একাধিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. একেএমএ মুকতাদির জানান, মানুষের জন্য, মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও বেঁচে থাকার তাগিদ অনুভব করি। সেবাব্রত নিয়ে এ পেশায় এসেছিলাম। সেই পেশায় লাখ লাখ মানুষকে সেবা দিতে পেরে আমি গর্ব অনুভব করি। এ সেবা ও মানুষের কল্যাণে যেন কাটিয়ে যেতে পারি তার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।