Logo
Logo
×

সারাদেশ

খুলনার ছোটমনি নিবাসে যমজ শিশু মুসা ও মাইশা, গাজীপুরে মা

Icon

ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর ব্যুরো

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২৮ পিএম

খুলনার ছোটমনি নিবাসে যমজ শিশু মুসা ও মাইশা, গাজীপুরে মা

১৮ দিন ধরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে যমজ সন্তান ও তাদের মা চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেলেও তারা দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। আদালতের নির্দেশনায় জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যশোরে যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে গাজীপুরে ও দুই নবজাতককে খুলনার ছোটমনি নিবাসে পাঠানো হয়েছে।

মা মাহিনুর গেলেন গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে। আর যমজ দুই শিশু মোহাম্মদ মুসা ও মোছা. মাইশা গেল খুলনার ছোটমনি নিবাসে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে আলাদা দুটি অ্যাম্বুলেন্সে তাদের সরকারি দুই আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

তাদের বিদায় জানান যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্লা, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজসেবা অফিসার রুবেল হাওলাদার। পরে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারও তাদের বিদায় জানান।

মা মাহিনুরকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রের উদ্দেশে যাত্রা করেন জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন এবং শিশু মোহাম্মদ মুসা ও মাইশাকে নিয়ে খুলনার ছোটমনি নিবাসের উদ্দেশে যাত্রা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা খালেদা আক্তার।

এ বিষয়ে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা বাঘারপাড়াতে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে হাসপাতালে তাদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করে মাকে গাজীপুরে আশ্রয় কেন্দ্রে এবং দুই সন্তানকে খুলনার ছোটমনি নিবাসে পাঠানো হচ্ছে।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও তার দুই সন্তানকে পাওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসা ও দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশনায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মা ও দুই সন্তানকে দুটি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। রাষ্ট্র তাদের দায়িত্বভার নিয়েছে।

যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ বলেন, মা ও দুই নবজাতক হাসপাতালে আসার পর আমরা সবধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছি এবং দেখাশোনা করেছি। মা ও দুই সন্তানকে এখন সরকারি দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণ করা হচ্ছে।

জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন বলেন, তিনি মা মাহিনুরকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন। সেখানে তাকে হস্তান্তর করে ফিরবেন। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর মা ও দুই নবজাতক যশোর হাসপাতালে আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অফিস, আনসার সদস্য, এনজিও কর্মীদের সাথে তিনি গত ১৮ দিন তাদের দেখভাল করেছেন। শিশু দুটির নাম রাখা হয়েছে মোহাম্মদ মুসা ও মোছা. মাইশা।

এর আগে সোমবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় মা ও সন্তানদের এই দুই আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর গত বৃহস্পতিবার পুলিশের আবেদনের শুনানিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিচারক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী ও দুই নবজাতকের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার বিষয়ে জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডকে দায়িত্ব দেন।

জানা যায়, ১৮ দিন ধরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে যমজ সন্তান ও তাদের মা চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেলেও তারা দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। 

গত ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের নতুন গ্রামের জামিরুল ইসলামের খড়ের ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে গৃহকর্তা জামিরুল ওই নারীকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এরপর থেকে মা ও দুই নবজাতক যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

হাসপাতালে ভর্তির সময় ওই নারীর পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরবর্তীতে পিবিআই ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। জানা যায়, ওই নারীর নাম মোসাম্মৎ মাহিনুর। তিনি খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে। পিবিআই মাহিনুরের মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা মাহিনুর ও তার সন্তানদের নিতে রাজি হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম