কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমার উপরে, তলিয়ে গেছে বহু বাড়িঘর
রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম
অব্যাহত বৃষ্টিপাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েই চলেছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ের মোট ১৬টি গেট খুলে পানি ছাড়া হলেও হ্রদের পানি এখনো বিপৎসীমার উপরে। তলিয়ে গেছে সদরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার হ্রদ তীরবর্তী এলাকার বহু বাড়িঘর, স্থাপনা, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। এতে পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ।
বুধবার বিকালে সদরসহ জেলায় ১০ হাজারের অধিক পানিবন্দি মানুষের প্রাথমিক তালিকা করেছে জেলা প্রশাসন। তালিকা তৈরির পাশাপাশি দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন জানায়, সদরসহ রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলায় হ্রদ তীরবর্তী বাড়িঘর তলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বহু পরিবারের বাড়িঘর। তলিয়ে গেছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে উজানের দিকে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে দ্রুত পানি বাড়ছে। কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ের গেট খুলে হ্রদের পানি ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে।
জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ পানির ধারণক্ষমতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০৯ ফুট উঁচুতে। বর্তমানে হ্রদে পানি রয়েছে ১০৮ দশমিক ৫৪ ফুট। ১০৭ ফুট অতিক্রম করলে বিপৎসীমা। এ অবস্থায় পানি ছাড়া না হলে যে কোনো মুহূর্তে কাপ্তাই হ্রদে পানি উপচে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়িঘরসহ ডুবেছে রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়। ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে ৩ হাজার ২১২ হেক্টর ফসলি জমি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মৃদুল কান্তি তালুকদার জানান, ৩টি উচ্চ বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এসব বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বিভাগ।
এদিকে রাঙামাটি শহরের হ্রদ তীরবর্তী অসংখ্য বাড়িঘরে পানি উঠে চরম দুর্গতির শিকার হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। শহরের ব্রাহ্মণটিলা, রাঙাপানির নুও আদাম, লুম্বিনী, আলুটিলা এলাকায় রাস্তা ডুবে যাওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ হচ্ছে স্থানীয়দের। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন আশপাশের মানুষ। এছাড়াও শহরের পুরানবস্তি, জালিয়াপাড়া, পাবলিক হেলথ, রাজদ্বীপ, বনরুপা, গর্জতলী, আলমডক, রিজার্ভবাজার, জুলুক্যাপাহাড়, চেঙ্গিমুখ, তবলছড়ি, আসামবস্তিসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগের শিকার বহু পরিবার।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হু হু করে বাড়ছে হ্রদের পানি। পানির চাপ কমাতে কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ের ১৬টি দরজা খুলে দিয়ে হ্রদের পানি ছাড়ছে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ।
কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ায় গত সপ্তাহ হতে দুই দফায় হ্রদের পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার রাত থেকে ফের হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় বহু ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। এতে আবারও বাঁধের স্প্রিলওয়ের ১৬টি গেট খুলে পানি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান জানিয়েছেন, জেলার ৪টি উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট মোকাবিলায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।