দায়িত্ব নিয়ে নগরবাসীর সহযোগিতা চাইলেন গাজীপুরের প্রথম নারী মেয়র
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন সোমবার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে এক অভিষেক ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মেয়র জায়েদা খাতুন নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা লাখ লাখ ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমার আগেও আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিলেন। এজন্য আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। তিনি নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততার সঙ্গে নগরবাসীর সেবা তথা দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গাজীপুর নগরবাসী আমার ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা এবং আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ও আধুনিক নগর উপহার দেব। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। পরে মেয়র নগর ভবনে গিয়ে তার আসনে বসেন।
এ সময় তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমও পাশে ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং এমপি-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কোনো বড় নেতাকে দেখা যায়নি।
অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তিনি বলেন, আপনারা মাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। মা-ও বলেছেন তার জীবনবাজি রেখে আপনাদের পাশে থাকবেন, সেবা দেবেন। আপনারা জানেন নির্বাচনের প্রচারণার কাজে টঙ্গীতে গেলে তিনি বারবার বাধা ও হামলার শিকার হয়েছেন। তারপরও তিনি থেমে যাননি।
তিনি আরও বলেন, জন্মের পর বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমি সংগঠনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধত্ব করার কাজটি শিখেছি।
তিনি আরও বলেন, কেউ এ শহরের ক্ষতি করবেন না। এ শহর রক্ষার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কষ্ট করেছি। আবারো প্রয়োজন হলে মায়ের সঙ্গে থেকে এ সিটির জন্য কাজ করব।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম সফিউল আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আব্দুল হান্নানসহ সব নির্বাচিত কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার সকাল ৯টার পর থেকেই গাড়িতে চড়ে এমনকি হেঁটে তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা বাদ্য বাজিয়ে নেচেগেয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে থাকেন। একপর্যায়ে পুরো এলাকা আনন্দ মিছিল ও লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে গাজীপুর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম সফিউল আজম ও নির্বাচিত কাউন্সিলররা নতুন মেয়রকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে তিনি নগর ভবনে বিকাল পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ করেন। এ সময় উৎসুক নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত নগর ভবনে ভিড় জমান।
এদিন গাজীপুর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম সফিউল আজম নতুন মেয়রের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। আগের দিন রোববার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে এক চমক সৃষ্টি করেন। ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।
বিগত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ও মেয়র পদ হারানো সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ছেলের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের কারণে মা জায়েদা খাতুনও ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন; কিন্তু ব্যাংকে জামিনদার হয়ে ঋণ খেলাপি হওয়ায় ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল হলে মায়ের সঙ্গেই ভোটযুদ্ধে নামেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন জায়েদা খাতুন বলেছিলেন ছেলের প্রতি নগরবাসীর ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্যই তিনি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মেয়র জাহাঙ্গীরকে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গাজীপুর, নওগাঁ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। সম্প্রতি তাকে আওয়ামী লীগ থেকে ক্ষমা করা হয়। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আবার গাজীপুর সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে দল থেকে আবারো বহিষ্কার করা হয়।