Logo
Logo
×

সারাদেশ

পদ্মার গর্ভে বিলীন জেলেখার শেষ সম্বল 

Icon

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০১:১২ এএম

পদ্মার গর্ভে বিলীন জেলেখার শেষ সম্বল 

ষাটোর্ধ জেলেখা খাতুন স্বামী ফজল বিশ্বাসকে হারিয়েছেন সাত বছর আগে। ৬ কন্যা সন্তান নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া পদ্মাপাড়ে আবিধারা গ্রামে ৭ শতাংশ জমিতে দুটি টিনের ঘর তুলে অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিনাতিপাত করে আসছেন তিনি। 

ছয় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে জীবনের সায়াহ্নে এসে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেখা। অন্যের বাড়ি কাজ করে কোনো রকম জীবন-যাপন করছেন তিনি। গত সোমবার রাতে পদ্মার করাল গ্রাসে মাত্র ৩০ মিনিটে নদি গর্ভে বিলীন হয়ে যায় তার বসতবাড়ি।

মাথার উপর চাল তো নেই, পায়ের তলায় শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে জেলেখা খাতুন এখন বাকরুদ্ধ। তারপরও পদ্মাপাড়ের মায়া তাকে আঁকরে ধরে রেখেছেন। 

বৃহস্পতিবার দুপুর ভাঙন কবলিত হরিরামপুরে আবিধারা গ্রামে গেলে জেলেখা খাতুনের দেখা মেলে। শেষ সম্বল হারিয়ে পদ্মা পাড়ের একটি খুপরি ঘরে অপলক দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

জেলেখা খাতুন জানান, তিনি এখন পথের ফকির, এই দুনিয়ার তার নিজের বলতে আর কিছু নেই। তিন সব হারানোর শোকে খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। রাতও কাটে নিদ্রাহীন।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জায়েদ খানসহ স্থানীয়রা তার খাবারের ব্যবস্থা করেন। এভাবে কে কয়দিন খাবারের জোগান দিবেন! শেষ সম্বল হারানো ধকল জেলেখার জীর্ণশীর্ণ দেহে মারাত্মক ক্ষত হয়ে থাকবে এমনটি জানালেন চেয়ারম্যান জায়েদ খান। জেলেখা খাতুন কোথায় গিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা।

জেলেখার মতো আরেক বিধবা আলেয়া বেগম। বয়স ষাটের কোঠায়। স্বামী আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন প্রায় ১১ বছর হলো। পদ্মায় এপর্যন্ত তার স্বামীর বাড়ি তিনবার সরাতে হয়েছে। আলেয়া দেখেছেন শ্বশুরের ১শত পাখি সম্পত্তি ছিল।

পদ্মা গিলতে গিলতে এখন মাত্র ১৫ শতাংশ ঠেকেছে। সেটিও সোমবার রাতে পদ্মা নদীর মাত্র ৩০ মিনিটের তান্ডবে ভিটির কোনায় এসে ঠেকেছে। ভাঙন আতঙ্কে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের সহায়তায় বসত ঘড়টি খুলে ফেলা হয়েছে। ভিটে থেকে পদ্মার ছোবল মাত্র কয়েক ফুট।

আলেয়া বেগমের ঘরের সামনে দেবর আফজাল খানের ঘর ছিল । আফজাল ঢাকায় প্রেসের ব্যবসা করে ভালো অবস্থায় আছেন। শখ করে বেশ কয়েক লাখ টাকা খরচ করে টিপটপ পাকা দেয়াল করে ঘর করেছিলেন। ডেকোরেশনও ছিলো চোখে পড়ার মতো। কিন্ত আফজাল খানের সেই শখের ঘরে এক রাতও থাকার ভাগ্য হয়নি। পদ্মা তার স্বপ্ন তছনছ করে দিয়েছে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভাঙন কবলিত এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড আবিধারা গ্রামটি রক্ষায় শত শত জিও ব্যাগ, জিও টিউব ফেলছে। ভাঙন কবলিত পদ্মা পাড়ের রাস্তার ইট গুলো তুলে নেয়া হচ্ছে।

এদিকে ভাঙন কবলিত এলাকা দেখতে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান। মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মঈন উদ্দিন জানালেন যেসব জিও টিউব ফেলা হচ্ছে এর এক একটির ওজন ৫ টন করে। তিনি আশাবাদী শতবর্ষী ৪৬নং চর মুকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাকি অংশসহ আবিধারা গ্রাম রক্ষা করা সম্ভব। 

এসময় হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান অভিযোগ করে জানান পার্শ্ববর্তী দোহার উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা শহিদ মেম্বার অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে এই শহিদ মেম্বারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে একাধিক মামলা হয়েছে।

শতবর্ষী ৪৬নং চর মুকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পদ্মায় আংশিক বিলীন হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তাপসী রাবেয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো.মাইনুল ইসলাম উপস্থিত থেকে নিলামে তুলেন। স্থানীয় এক ব্যক্তি দ্বিতল বিশিষ্ট স্কুলটি ৫০ হাজার টাকায় নিলামে কিনে নেন।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম