কেজি ২৮ লাখ টাকা! বিশ্বের সবচেয়ে দামি মরিচ নিয়ে কৌতূহল
আবুল খায়ের, কুমিল্লা
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৭ পিএম
কুমিল্লায় ২৮ লাখ টাকা কেজির ‘চারাপিতা’ নামের রাজসিক মরিচ নিয়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। সম্প্রতি নগরীর ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি এলাকার শৌখিন কৃষক আহমেদ জামিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ মরিচের বীজ সংগ্রহ করে নিজ আঙিনায় রোপণ করেন। গাছে কাঙ্ক্ষিত ফল আসায় বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এতে সারা দেশ থেকে শত শত দর্শনার্থী, গবেষক, উদ্যোক্তা, কৃষক এবং নার্সারি মালিক প্রতিদিনই ওই শৌখিন কৃষকের আঙিনায় ভিড় করছেন। কৌতূহলী নগরবাসীর প্রশ্ন কী গুণ আছে এই চারাপিতা মরিচে? কেন এর মূল্য প্রতি কেজি ২৮ লাখ টাকা! যেকোনো মাটিতে এ মরিচের ফলন হবে? কারা ব্যবহার করে এই মরিচ?-উৎসুক জনতার মাঝে এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
অপর দিকে বাণিজ্যিকভাবে এ মরিচ চাষ করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকরা।
আহমেদ জামিল সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে দামি এবং সুগন্ধি চারাপিতা মরিচ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বীজ এনে নিজের বাড়িতে রোপণ করেন। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে আবাদ হওয়া এ জাতের মরিচের ঝাল কম। এটি সুগন্ধিজাতীয় মরিচ। দেখতে গোলাকার এ মরিচ কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের হলেও পাকলে হলুদ হয়ে যায়।
এদিকে চারাপিতা মরিচ নিয়ে হইচইয়ের মাঝে এটি চাষে সফলতা এবং উপযুক্ত মাটি নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
কৃষক আহমেদ জামিল বলেন, বাংলাদেশে সম্ভবত আমিই প্রথম এ মরিচের বীজ লাগিয়েছি। চার মাস আগে বস্তার ভেতর মাটি ভরে বীজ রোপণ করি। ৫০টি বীজের মধ্যে তিনটি বীজ থেকে চারা গজায়। তিন বছর পর্যন্ত এ গাছ থেকে মরিচ পাওয়া যাবে।
কৃষক জামিলের দাবি, চারাপিতা পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মরিচ। ১ কেজি মরিচের দাম ২৬ হাজার ডলার বা ২৮ লাখ টাকার মতো। অত্যন্ত সুগন্ধি এই মরিচ আরব দেশের রাজা-বাদশাহরা তাদের খাবারে ব্যবহার করেন। মক্কার অনেক দামি হোটেলেও এটি ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, এ মরিচ গাছে বৃষ্টির পানি পড়তে পারবে না, কিন্তু রোদ লাগাতে হয়। এটি পেরুতে চাষ হয়। এটি মসলাজাতীয় মরিচ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শামসিল আরেফিন ভূঁইয়া বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এ মরিচের চাষ করতে পারলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ জাতের মরিচ নিয়ে গবেষণা করা দরকার।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন বলেন, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মরিচ। কৃষক আহমেদ জামিল প্রথম দফা বীজ বপন করে সফল হননি। দ্বিতীয়বারে বীজ লাগিয়ে মাত্র তিনটি গাছ টিকাতে পেরেছেন। বাংলাদেশের জলবায়ু এটি চাষে কতটুকু সফল, সেটা নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। এটি সাধারণত বেলে মাটিতে হয়। আমরা তাকে সহযোগিতা করেছি। গুগলে দেখে আমরা তাকে পরামর্শ দিয়েছি।
জানা গেছে, শৌখিন কৃষক আহমেদ জামিল দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ব্যতিক্রমী সবজি ও ফল চাষ করে চমক সৃষ্টি করছেন। এরই মাঝে তিনি কালো টমেটো ও কালো ধান চাষে সফল হয়ে ব্যাপক আলোচিত হন। তাকে দেখে অনেক কৃষক অনুপ্রাণিত হয়ে সফলও হয়েছেন। ওই কৃষকের বাগানবাড়িতে দেখা মিলবে শত শত ব্যতিক্রমী ফল ও সবজির গাছ।