ইডেনের ছাত্রী মেঘার মৃত্যুর সাড়ে চার বছরেও বিচার শেষ হয়নি
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম
ঝালকাঠির মেয়ে ইডেন কলেজের ছাত্রী সায়মা কালাম মেঘার মৃত্যুর ঘটনায় সাড়ে চার বছর পার হলেও এখনো বিচার শেষ হয়নি। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রধান অভিযুক্ত মাহিবী হাসান, তার মা সেলিনা নফিসসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। অভিযোগ গঠনের পর তিন বছর অতিবাহিত হলেও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে মাত্র চারজনের।
গত রোববার সাক্ষ্য দেন সায়মা কালাম মেঘার বাবা আবুল কালাম আজাদ। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেন জানান, সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি, ভিকটিমের সুইসাইড নোট, সুরতহাল, ভিসারা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তিন আসামি মাহিবী হাসান, তার মা সেলিনা নাফিস ও বোন নওরিন বন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের মেয়ে ঢাকা ইডেন কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী সায়মা কালাম মেঘার সঙ্গে ঝালকাঠি শহরের বিআইপি সড়কের মৃত নাফিস উদ্দিনের ছেলে বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র মাহিবী হাসানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে মাহিবী হাসান ও তার পরিবার বিয়ের প্রস্তাব অস্বীকার করেন। এতে ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল বিকাল ৫টায় সায়মা কালাম মেঘা ঢাকার ধানমন্ডির একটি ভাড়া বাসায় মাহিবীর সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। এ ব্যাপারে মেঘার মা রুবিনা বেগম বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে তিন আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদন দাখিলের পর আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত প্রধান আসামি মাহিবীকে কারাগারে পাঠিয়ে তার মা ও বোনের জামিন মঞ্জুর করেন। দীর্ঘ ছয় মাস পর মাহিবী জামিন লাভ করেন।
রোববার সাক্ষ্যপ্রদান শেষে মেঘার বাবা আবুল কালাম আজাদ আদালতে বলেন, মেঘার সঙ্গে মাহিবীর প্রেমের সম্পর্ক জেনে আমি ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে পাঠাই। তারা বিয়ে দিতে অস্বীকার করেন। ঘটনার দিন আমার মেয়ে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেছে এবং মাহিবী হাসান নিজে তা ফেসবুক লাইভে দেখেছে। মাহিবী হাসান ইচ্ছা করলে আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারত।
আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মাহিবী হাসান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর থেকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য অথবা আপস করার জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। এমনকি আমার নামে মিথ্যা মামলাও দায়ের করে।
ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ বলেন, চার্জ গঠন হওয়ার পর আসামিরা সেই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেছিল। সেই কারণে কিছুদিন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ ছিল। হাইকোর্ট রিভিশন আবেদন খারিজ করে দিলে আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বাদীসহ চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বাকি সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।