বগুড়ার গাবতলীতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবতার দেওয়াল ফাউন্ডেশনের’ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচারাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন বয়সের চারশ মানুষ দিনভর দুর্গাহাটা ইউনিয়নের কাঁকরাগাতী হয়ে বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের দশ মাইল কালীগাছ পর্যন্ত এ রাস্তা নির্মাণে অংশ নেন।
এছাড়া তারা নিজেদের অর্থায়নে এ সড়কের মাঝে ইছামতি নদীতে ১০০ ফুট স্টিলের সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে তিন উপজেলার হাজারও মানুষের চলাচলের পথ সুগম হবে।
জানা গেছে, বগুড়ার গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ তরণীহাট ও দুর্গাহাটায় যাতায়াতের জন্য নৌকা ছাড়া কোনো বাহন নেই। তাদের নৌকায় ইছামতি নদী পার হয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। তবে অন্য পথে যাতায়াত করতে প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। কৃষক দুর্গাহাটা থেকে কোনো কৃষিপণ্য তরণীহাটে নিলে অন্তত ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। তাই যাতায়াত, বাজারে কৃষি পণ্য পরিবহণ ও জমিতে হাল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিতে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী গঠন ‘মানবতার দেওয়াল ফাউন্ডেশন’ এ উদ্যোগ নেয়। তারা অসহায় গরিব মানুষের পাশে আপদে-বিপদে সহায়তা করে থাকে।
সংগঠনটি দরিদ্র ব্যক্তির মেয়ের বিয়ে, চিকিৎসা, ধর্মীয় উৎসব, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা কাজে সাধ্যমত অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে।
রাস্তা নির্মাণে দেওয়া জমির মালিক ইসাহাক আলী, আব্দুল বাছেদ, খাদেমুল ইসলাম, আনারুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের প্রয়োজনে এ রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীদুল কবীর টনি, বালিয়াদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী ফকিরসহ মানবতার দেয়াল ফাউন্ডেশনের আরিফুর রহমান জিসনু, লতিফুল বারী, মজিবুর রহমান পুটু, বাদশা খন্দকার, আব্দুল মালেক, কুটামহিন গ্রামের ইউপি সদস্য জমি মালিক বদিউজ্জামান সজিবসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই। কাজ শেষে সবাই টাকা দিয়ে বাজার করে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করেন।
মানবতার দেওয়াল ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুর রহমান জিসনু বলেন, স্বেচ্ছায় আমরা দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা তৈরি করেছি। এতে তিন উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ ও এলাকার কৃষক সহজে মাঠে চাষাবাদ করতে, গরু, ছাগল নিয়ে চলাচল করতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা খুব সহজে পার্শ্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, এই রাস্তার মাঝে নয়াপাড়ার পূর্বপাশে ও সাকিদারপাড়ার দক্ষিণ পাশে একটি বাঁশের সাঁকো আছে। এতে মানুষ যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু পাশাপাশি দুটি ভ্যান চলাচলের উপযোগী ওই সাঁকো দিয়ে পণ্য পরিবহণ সম্ভব নয়। তাই সেখানে ১০০ ফুট সেতু নির্মাণ করতে হবে। তাতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এলাকাবাসীদের প্রতিশ্রুতি অনুসারে টাকা পাওয়া যাবে। এ টাকা দিয়ে দ্রুত স্টিল সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই স্বেচ্ছায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। গরিব দুখীদের সহায়তা করতে পারলে আমাদের ভালো লাগে। আমাদের এই স্বেচ্ছাশ্রমের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।