নির্যাতন সইতে না পেরে শরীরে আগুন, গৃহবধূর মৃত্যু
যুগান্তর প্রতিবেদন, মুন্সীগঞ্জ
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৩, ০৬:০৩ পিএম
স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন গৃহবধূ রিতু আক্তার। আগুন দেওয়ার পাঁচদিন পর শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ রিতু আক্তারের (৩০) মৃত্যু হয়। পুলিশ গৃহবধূ রিতুর স্বামী হেলাল সরকারকে শনিবার গভীর রাতে গ্রেফতার করে।
নিহত রিতু সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের ভাসানচর মাঝিকান্দি এলাকার আব্দুর রহিমের মেয়ে।
পরিবারের দাবি, স্বামী হেলাল সরকার (৪০) ও শাশুড়ি আলেয়া বেগমের নির্যাতন সইতে না পেরে রিতু শরীরে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
এ ঘটনায় স্বামী ও শাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন রিতুর বাবা আব্দুর রহিম।
অভিযোগে জানা যায়, ১১ জুলাই দিবাগত রাত ৩টার দিকে স্বামী ও শাশুড়ির অপমান-নির্যাতন সইতে না পেরে গায়ে আগুন দেন রিতু।
বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ছয় বছর আগে পারিবারিকভাবে পাশের আধারা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী হেলাল সরকারের সঙ্গে আমার মেয়ে রিতুর বিয়ে হয়। তাদের চার বছর বয়সী এক ছেলে আছে। অভিযুক্ত হেলাল আগেও একটি বিয়ে করেছিলেন। আমার মেয়েকে বিয়ের পর থেকেই হেলাল ও তার মা আলো বেগম কারণে-অকারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি কথায় কথায় মরে যেতে উসকানি দিতেন। বিষয়টি সে আমাকে জানালে আমি জামাইকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমাকে হুমকি-ধমকি দেন।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাত ৩টার দিকে রিতুর সঙ্গে স্বামী ও শাশুড়ির ঝগড়া হয়। এ সময় হেলাল রিতুকে বলে, ‘তুই মরতে পারিস না? তুই মরলেই তো আমি আবার বিয়ে করার সুযোগ পাই’। রিতু এ কথা সহ্য করতে না পেরে ঘরে থাকা কেরোসিন গায়ে ছিটিয়ে আগুন দেয়। ঘটনাটি জামাই মোবাইল ফোনে আমাকে জানায়। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ রিতুকে প্রথমে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানেই পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শনিবার সন্ধ্যায় মারা যায় রিতু। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারিকুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ভুক্তভোগীর বাবা থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্তে নামে এবং শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে ভুক্তভোগীর জবানবন্দি রেকর্ড করে। এ ঘটনায় রিতুর স্বামী হেলাল সরকারকে গ্রেফতার করা হয়।