জার্মানির স্বর্ণপদক জয়ী প্রতিবন্ধী রূপালীকে সংবর্ধনা
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩, ০৮:৫৪ পিএম
জার্মানির বার্লিনে স্বর্ণপদক জয়ী বাকপ্রতিবন্ধী রুপালী খাতুনকে (১৬) নড়াইলে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। রোববার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড গেমস বার্লিন (জার্মানি)-২০২৩ এ সাঁতারে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জপদক অর্জন করায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাকপ্রতিবন্ধী রুপালী খাতুন নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের তারাশি (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের বর্গাচাষি টুকু মিয়া শেখের মেয়ে।
জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, জার্মানির বার্লিনে ১৭১টি দেশের অংশগ্রহণে স্পেশাল অলিম্পিক সামার ওয়ার্ল্ড গেমস-২০২৩-এর সাঁতার প্রতিযোগিতায় রুপালীসহ ৬ জন অংশ নেন। গত মাসের ১২ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ সাঁতার প্রতিযোগিতায় বাকপ্রতিবন্ধী রুপালী দুই ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর সহধর্মিণী শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সদর পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, জেলা ক্রীড়া অফিসার কামরুজ্জামান, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া ইউসুফ, শিকদার ফাউন্ডেশনের পরিচালক সিকদার মনজুরুর রহমান পান্নু, রূপালীর গর্বিত বাবা টুকু মিয়া প্রমুখ।
স্বর্ণপদক জয়ী বাকপ্রতিবন্ধী রুপালী খাতুনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা উপহার স্বরূপ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে রুপালী খাতুন দুই ক্যাটাগরিতে স্পেশাল অলিম্পিকে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছেন যেটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। নড়াইলের সংসদ সদস্য বিশ্ববরেণ্য ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার জন্ম। এই জেলায় যোগদানের পূর্বে শুনেছি আর নিজ চোখে এখন দেখছি। সব ধরনের খেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নড়াইলের ছেলে-মেয়েরা সমানতালে প্রতিনিধিত্ব করছেন। যেখানে গুণীর কদর হয় না সেখানে গুণী জন্মায় না। রুপালী খাতুনের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
রুপালী খাতুনের বাবা টুকু মিয়া শেখ যুগান্তরকে বলেন, অভাব অনটনের সংসারে প্রতিবন্ধী মেয়ে যেকোনো বাবার জন্যই চিন্তার কারণ। রুপালীর জন্মের পর চিন্তায় পড়লেও মেয়েটার দিকে অন্য সন্তানদের চেয়ে বেশি খেয়াল রাখতাম। তার বয়স যখন সাত বছর তখন থেকেই সাঁতারে তার আগ্রহ ছিল বেশি। চাহিদা মতো সব দিতে পারি না তাই বাবা হিসেবে কষ্ট লাগে। আমার মেয়েটা কথা বলতে পারে না। তবে ইশারায় সব বোঝাতে পারে। ইশারা ইঙ্গিতে বোঝায় মাশরাফির মতো বড় হতে চায় সে। জার্মানির বার্লিন থেকে সে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জপদক নিয়ে এসেছে। বাবা হিসেবে তার প্রতিটা অর্জনে আমার কলিজা ভরে যায়। আমাদের প্রিয় ভাই সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন আমার মেয়েটার দিকে সুদৃষ্টি দেওয়ার আহবান জানাই। অপরদিকে আমার মেয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো অর্জন দেশকে উপহার দিবে ও সম্মান বয়ে আনবে ইনশাল্লাহ।
সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. জসিম মোল্যা বলেন, রুপালী স্বর্ণপদক জয়ী হওয়ায় আমরা ইউনিয়নবাসী তথা নড়াইলবাসী গর্বিত। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে খুব দ্রুতই তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সে যাতে আরও ভালো করতে পারে, আমি তার জন্য দোয়া করি।