Logo
Logo
×

সারাদেশ

বাংলাভাইয়ের টর্চারসেলে নির্মিত হচ্ছে শহিদ মিনার

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৩, ০২:৫২ পিএম

বাংলাভাইয়ের টর্চারসেলে নির্মিত হচ্ছে শহিদ মিনার

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সামরিক কমান্ডার জঙ্গিনেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই রাজশাহীর বাগমারার সিকদারি এলাকায় চরমপন্থি নিধনের নামে শুরু করেছিলেন দুই মাসব্যাপী অভিযান। 

অভিযান শুরুর দিন চরমপন্থি ক্যাডার ওসমান বাবুকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে জেএমবি ক্যাডাররা। এ সময়ে বাংলাভাইয়ের প্রধান টর্চারসেল ছিল বাগমারার হামিরকুৎসা স্কুলসংলগ্ন আমবাগান ও মাঠ। এখানেই বাংলাভাইয়ের নির্দেশে জেএমবি ক্যাডাররা সর্বহারা নামে লোকজন ধরে এনে প্রকাশ্যে সাজা দিতেন। হাত-পা বেঁধে একটি বাঁশের মাচার ওপর ফেলে দিয়ে প্রকাশ্যে পেটানো হতো। 

নির্যাতিত ব্যক্তির চিৎকারের আহাজারি মোবাইলে তাদের স্বজনদের শোনানো হতো। এই টর্চারসেলটির দুঃসহ স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে জাগরুক রাখতে এলাকাবাসী সেখানে নির্মাণ করছেন একটি শহিদ মিনার। দ্রুতই এ শহিদ মিনারের কাজ শেষ হবে। আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।

দেশে ইসলামি শাসন কায়েম ও চরমপন্থি সর্বহারাদের রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর এলাকা থেকে উচ্ছেদের নামে একের পর এক নৃশংসভাবে খুন করে জেএমবি ক্যাডাররা। বাগমারা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা নাটোরের নলডাঙ্গা, নওগাঁর আত্রাই ও রানীনগর এবং রাজশাহীর মোহনপুর ও দুর্গাপুর এলাকাতেও চরমপন্থিবিরোধী অভিযান সম্প্রসারণ করা হয় জেএমবির পক্ষ থেকে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় সর্বহারা চরমপন্থি সন্দেহে লোকজনকে ধরে এনে নৃশংস কায়দা হত্যা করা হতো। জেএমবি ক্যাডাররা সবসময় বহন করতেন অস্ত্র ও লাঠি। মাথায় পাগড়ি পরে জেএমবির স্লোগান দিতে দিতে অভিযানে বের হতেন হামিরকুৎসা স্কুল মাঠের প্রধান টর্চারসেল থেকে।
 
জানা যায়, জেএমবি কমান্ডার বাংলাভাই বাগমারা ছাড়াও এসব এলাকায় স্থাপন করেন ১২টি টর্চারসেল। তবে বাংলাভাইয়ের প্রধান টর্চারসেলটি ছিল বাগমারার হামিরকুৎসা হাইস্কুলসংলগ্ন আমবাগানটি। এই স্কুল থেকে অনতিদূরে কুখ্যাত রাজাকার রজমান কায়ার বাড়িতে বাংলাভাই, জেএমবিপ্রধান শায়খ আবদুর রহমান, তার ভাই আতাউর রহমান সানি, ভাগ্নে শহিদসহ জেএমবির শীর্ষ নেতারা অবস্থান করতেন। গ্রামের লোকেরা ভয়ে চাল-ডাল-শাকসবজি-মাছ-মাংস পৌঁছে দিতেন এখানে। জেএমবি নেতারা প্রায় দুই মাস এই এলাকায় অবস্থান করেন। 

এ সময় জেএমবির হাতে ২৯ জন নিহত হন। গুম করা হয় বেশ কিছু মানুষ, যাদের আজও খুঁজে পাননি স্বজনরা। জেএমবির নির্যাতনে পঙ্গু হন কয়েকশ মানুষ। তারা এখনো বাংলাভাই বাহিনীর নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই নির্যাতনপরবর্তী সুচিকিৎসার অভাবে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। 

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেএমবি কমান্ডার বাংলাভাই ও তার ক্যাডাররা প্রধান টর্চারসেল হামিরকুৎসা হাইস্কুলের উদ্যোগে নির্মিত শহিদ মিনারটি গুড়িয়ে দিয়েছিলেন অভিযানের সময়। বাংলা ভাই একদিন নিজ হাতে হাতুড়ি দিয়ে স্কুল মাঠের শহিদ মিনারটি গুড়িয়ে দেন। 

সেই সময় বাংলাভাই এলাকাবাসীকে বলেছিলেন— শহিদ মিনার তাগুতি শাসনের চিহ্ন। শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া হারাম কাজ। এ ছাড়া এলাকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনার ভেঙে দিয়েছিলেন তারা। 

তবে সম্প্রতি হামিরকুৎসা স্কুলের সেই জায়গায় একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করছেন এলাকাবাসী, যেখানে বাংলাভাই প্রধান টর্চারসেল করেছিল। জঙ্গিদের নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতিকে স্মরণে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে জঙ্গিদের দুঃখ নির্যাতনের ঘটনাকে জাগরুক রাখতে এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনিমুল হকের অর্থায়নে শহিদ মিনারটির নির্মাণকাজ এখন শেষের পথে। 

মনিমুল হক জানান, দ্রুত শহিদ মিনারটির নির্মাণকাজ শেষ হবে। আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে শহিদ মিনারটি উদ্বোধন করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম