ইঞ্জিন রুমে জমে থাকা গ্যাস থেকেই সাগর নন্দিনীতে প্রথম বিস্ফোরণ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩, ০৬:০৯ পিএম
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ তেলবাহী জাহাজের ইঞ্জিন রুমে জমে থাকা গ্যাস থেকেই প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন। তবে দ্বিতীয় বিস্ফোরণের কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শনিবার দুপুরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ১১ লাখ লিটার পেট্রল-ডিজেল নিয়ে নোঙর করে থাকা তেলবাহী জাহাজ সাগর নন্দিনী-২-তে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত ও চারজন নিহত হয়। দুদিন পর সোমবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয়দফা বিস্ফোরণ অগ্নিকাণ্ডে ১২ পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়। দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণের আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা।
জেলা প্রশাসক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মো. রুহুল আমিন বলেন, বুধবার সিলগালা অবস্থায় রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে কয়েকটি কারণ উল্লেখ্য করা হয়েছে, তার মধ্যে গ্যাস থেকে ঘটতে পারে বলে কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের মতামতে উঠে এসেছে। তাছাড়া দগ্ধ শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের মতামত নেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত গণমাধ্যমকে এখনই জানাতে অস্বীকৃতি জানান কমিটি প্রধান।
তবে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জাহাজটির ফিটনেসসহ কাগজপত্রও সঠিক পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ ও পানিমিশ্রিত তেল অপসারণে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের ৮ সদস্যের গঠিত কমিটি। তবে জেলা প্রশাসকের গঠন করা কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, জাহাজের ইঞ্জিন রুম থেকে হয়তো গ্যাস জমে ছিল, গ্যাস অপসরণের জন্য জেনারেটর চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি নিয়ে আসা ও কয়েকদিন নোঙর করে রাখার ফলে গ্যাসের সৃষ্টি হতে পারে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিবলী জানান, তেলমিশ্রিত পানি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জাহাজটি যাতে ডুবে না যায় এজন্য ড্রেজার দিয়ে পেছনের অংশ সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে তেলের চেম্বারগুলোর উপরের অংশ ফাটা থাকলেও নিচের অংশ অক্ষত রয়েছে।
অপরদিকে নন্দিনী-৪ জাহাজের তেল অপসারণের জন্য নন্দিনী-১ জাহাজ আনা হয়েছে এবং সাগর নন্দিনী-৪ এর দুর্ঘটনা এড়াতে বিস্ফোরক টিম পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পানি ছিটানো হচ্ছে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. ফিরোজ কুতুবী জানান, তেলের জাহাজে থাকা অবশিষ্ট তেল অপসারণে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও নির্দেশনা ছাড়া তা এখনই অপসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জাহাজে পানি উঠে যাতে ডুবে না যেতে পারে সে ব্যাপারে তৎপরতা অব্যাহত আছে।
পদ্মা অয়েল কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, কয়েকটি জাহাজে তেল অপসরণ করা হয়েছে, কী পরিমাণ তেল এখনো আছে তা বলা যাচ্ছে না।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও তদন্ত কমিটি প্রধান মো. রুহুল আমিন জানান, সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ তেলবাহী জাহাজের ইঞ্জিন রুমে জমে থাকা গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে তদন্তকালে জানা গেছে।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জাহাজটির ফিটনেসসহ কাগজপত্রও সঠিক পাওয়া গেছে। বিস্তারিত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জানানো হবে বলে সাংবাদিকদের জানান এডিসি।