সুগন্ধায় জাহাজ বিস্ফোরণে নিহত মাস্টার বেলালের বাড়িতে মাতম
চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৩, ০৮:০৪ পিএম
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি সাগর নন্দিনী-২ তেলবাহী জাহাজ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার চার দিন পর সন্ধান মিলেছে নিখোঁজ মাসুদুর রহমান বেলালের মরদেহ। সোমবার বেলা ১১টায় ওই জাহাজের ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে নিহত বেলালের বাড়িতে চলছে এখন শোকের মাতম।
চাঁদপুর শহরের ছৈয়ালবাড়ি সড়কের নিহত বেলালের বাড়ি হ্যাপি ভিলায় গিয়ে দেখা যায় স্বামীর শোকে বেলালের স্ত্রী হ্যাপি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনরা সবাই ওই বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।
বেলাল ওই জাহাজের মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর থেকে জাহাজের চার স্টাফের সঙ্গে তিনিও নিখোঁজ ছিলেন। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত ওই জাহাজের আরেক স্টাফ কনু পাটোয়ারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজন কল্পনা মজুমদার। কনু পাটোয়ারীর বাড়ি চাঁদপুরের মৈশাদী গ্রামে।
দুই কন্যা সন্তানের জনক মাসুদুর রহমান বেলাল চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের বাগড়া বাজার সোবান গ্রামের সাদিকুর রহমানের ছেলে।
বেলালের বোন লতা বলেন, আমার ভাই শনিবার সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দুপুর ১টা ৩৩ মিনিটে সময় বাড়িতে ফোন করে জানান, তিনি জাহাজে পৌঁছেছেন এবং নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খাবেন। এরপর দুপুর আড়াইটায় জাহাজে অবস্থান করা একজনের কাছ থেকে আমরা জাহাজটিতে বিস্ফোরণের খবর পাই।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই দুপুর ২টার দিকে সুগন্ধা নদীতে ঝালকাঠি পৌর খেয়াঘাটের বিপরীত পাশে নোঙর করা অবস্থায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির তেলবোঝাই 'সাগর নন্দিনী-২' জাহাজে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ওই জাহাজের ইঞ্জিন কক্ষের ওপরে থাকা মাস্টার ব্রিজটি পুরোপুরি ছিটকে নদীতে পড়ে যায়। তবে যে অংশে তেল ছিল, সেই অংশটি অক্ষত ছিল। বিস্ফোরণের পর ওই জাহাজের ৯ জন কর্মীর মধ্যে চারজন প্রথমে নিখোঁজ ছিলেন। বাকি পাঁচ শ্রমিক দগ্ধ অবস্থায় আহত হন। ২ জুলাই রোববার নিখোঁজদের মধ্যে আব্দুস সালাম হৃদয় নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুর ২টার দিকে জাহাজের ইঞ্জিন রুম থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত হৃদয় জাহাজের গ্রিজারম্যান ছিলেন।
এদিকে এ ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির অপারেশন ম্যানেজারকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, জাহাজের ইঞ্জিন রুম থেকে যে লাশ পাওয়া গেছে তাকে শনাক্ত করেছেন জাহাজের বাবুর্চি বেলায়েত হোসেন। দুর্ঘটনার পর আহত বাবুর্চি বেলায়েতকে পুলিশের সহায়তায় চিকিৎসা দিয়ে তাকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের লাশ শনাক্তের জন্য রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের নভেম্বরে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ তেলবাহী জাহাজে দুর্ঘটনায় সাতজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। যার তদন্ত প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি।