মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দুই রাজাকার গ্রেফতার
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৭:৫৮ পিএম
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহীর চারঘাট থানা পুলিশ। চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রাম থেকে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে তাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কালুহাটি গ্রামের মৃত হাবিল উদ্দিনের ছেলে মফিজ উদ্দিন (৭৫) ও মৃত মোকসেদ আলীর ছেলে খেতাব আলী (৮০)। তারা কালুহাটি গ্রামে মফিজ রাজাকার ও খেতাব রাজাকার নামে পরিচিত। গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় খেতাব আলীকে শনিবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে মফিজ রাজাকারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
দুই রাজাকার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে শনিবার বিকেলে জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন এক সংবাদ ব্রিফিং করেন।
সংবাদ ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার জানান, মফিজ রাজাকার ও খেতাব রাজাকার একাত্তরে চারঘাট ও আশপাশের এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর অন্যতম সহযোগী হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করা, মুক্তিযুদ্ধ সমর্থনকারী মানুষের বাড়িঘরে লুটপাট করা ও তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটন করেন।
এদিকে দেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে ২০০৯ সালের ৯ এপ্রিল কালুহাটি গ্রামের শহীদ রওশন আলীর ছেলে গোলাম হোসেন বাদী হয়ে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মফিজ ও খেতাবসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চারঘাট থানায় একটি মামলা করেন।
মামলা করার পর থেকে আসামিরা আত্মগোপন করেন। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে তাদেরকে খুঁজছিল। নিজ নিজ বাড়ি থেকে শুক্রবার গভীর রাতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, রাজশাহীর আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হবে। এ মামলার ছয় আসামির মধ্যে ইতিমধ্যে তিনজন মারা গেছেন। দুইজন গ্রেফতার হয়েছে এবং বাকি একজন এখনো পলাতক আছে।
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, তার বাবা রওশন আলী সরকার ও রস্তুমপুর গ্রামের কলিম উদ্দিনকে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মফিজ রাজাকার ও খেতাব রাজাকার। পাক হানাদার বাহিনী তাদেরকে বিবস্ত্র করে সেনা জিপের পেছনে বেঁধে চলমান অবস্থায় নৃসংশভাবে হত্যা করে। পাশাপাশি তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হলে মফিজ ও খেতাব আত্মগোপন করেন। তবে কয়েক বছর পর তারা গ্রামে ফিরে আসেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, রাজশাহীতে মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনে ১৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ১৩২ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৫৩ জন। এখনো পলাতক আছেন ২ জন। বাকিরা জামিনে ও একটি মামলায় সাজা হয়ে কারাগারে আছেন একজন।