ভাতার টাকা আত্মসাৎ, সমাজসেবা কর্মকর্তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই ছেলে গ্রেফতার
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৩, ০৮:৫৮ এএম
সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়া, বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তা বেগম, তার সন্তান একেএম আছিব ও একেএম তৌহিদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার নগরকান্দা পৌরসভার মিনারগ্রামে আজাদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন আলামতও জব্দ করা হয়। টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলার সূত্র ধরে আলামত জব্দ ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। তবে ওই সময় আজাদ বাড়িতে ছিলেন না।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী উপজেলার বালিয়া গ্রামের লাইলি বেগম সমাজসেবা কর্মকর্তা, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে আসামি করে রোববার থানায় মামলা করেন। এরপর তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নগরকান্দা থানার এসআই গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম শনিবার বিকালে আবুল কালাম আজাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভাতা গ্রহীতার ফরম, ১৩টি মোবাইল ফোন সেট ও মাদকসেবনের উপকরণ জব্দ করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজাদের দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে থানায় আনা হয়। রোববার সকালে ৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়। আজাদকে গ্রেফতারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়েছে পুলিশ।
নগরকান্দা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত বিভিন্ন সরকারি ভাতা আত্মসাৎ করতে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মোবাইল ফোন নম্বর গোপনে বাতিল করা হয়। সমাজসেবা কর্মকর্তা তার বাসায় একাধিক মোবাইল ফোন ও সিম নম্বর ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
নগরকান্দা উপজেলার মাঠবালিয়া গ্রামের লাইলি বেগম ও পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার খালিশপুটি গ্রামের হাসিনা বেগম জানান, নগরকান্দা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার বাসায় তারা কাজ করতেন। সেই সূত্রে সমাজসেবা কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যরা সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৪টি ঘরের জন্য ২৫ হাজার করে ১ লাখ টাকা নেন এবং বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিক ও নগরকান্দা থানা পুলিশকে জানালে শনিবার আজাদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন আলামত জব্দ করে পুলিশ।
সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে, তারা আমার রক্তের ঔরসজাত সন্তান নয়। আমার স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তান। ওদের বাবা এলেম ২০১৩ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর আমি দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। তাদের এ অপকর্মে বাধা দেওয়ার তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা আমার কথা না শোনায় একসময় আমি বাসা থেকে চলে যাই। তাতেও তারা সংশোধন হয়নি। আমি এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নই। এ বিষয়ে নগরকান্দা থানার ওসি মিরাজ হোসেন বলেন, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগে আজাদের স্ত্রী ও দুই ছেলেকে আটকের পর গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেলা সমাজসেবা উপপরিচালক আলী আহসান যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল, আমরা তাদের তদন্ত করে যা ভালো হয়, সেটি করতে বলেছি। আজাদ দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।