শাহ আমানত বিমানবন্দর ৩ বছরে ১০০ কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ১০:৫০ পিএম
ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে স্বর্ণ পাচারকারীরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতি মাসেই আটক হচ্ছে কোটি কোটি টাকার চোরাই স্বর্ণের চালান। কখনো বার, কখনো অলংকার, কখনো বা এই স্বর্ণকে কব্জা বানিয়ে পাচার করা হচ্ছে। আর এই পাচারে জড়িত স্বর্ণ বহনকারীরা কোনো কোনো সময় গ্রেফতার হলেও মূল হোতারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদেরকে শনাক্তও করা যাচ্ছে না।
গত তিন বছরে শুধু চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে আনা ১৩৪ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়েছে। এর বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এই বিমানবন্দরে প্রতি মাসে গড়ে ১৫টির বেশি চোরাই স্বর্ণের চালান ধরা পড়ে। প্রতিবারই স্বর্ণ বাহকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু মূলহোতা রয়ে যায় পর্দার আড়ালে।
সর্বশেষ শুক্রবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে অভিযান চালিয়ে ৮ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৯ কেজি ওজনের স্বর্ণের বারের বড় ধরনের একটি চালান আটক করা হয়। সিএমপি’র কর্ণফুলী থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম নগরীর স্বর্ণ ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত হাজারী গলিতে আনার সময় এই চালান আটক ও জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার চারজনই নিজেদের স্বর্ণের চালানের বাহক বলে দাবি করেছেন। কর্ণফুলী থানা পুলিশ বলছে, কারা তাদের এই স্বর্ণ দিয়েছে, কার কাছে এসব দেওয়ার কথা ছিল তা তদন্ত করে বের করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, উদ্ধার করা স্বর্ণগুলো বিদেশ থেকে আনা। হয়তো এগুলো বিদেশ থেকে ঢাকা বিমানবন্দর হয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কক্সবাজার থেকে হাজারী গলিতে আনা হচ্ছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
গত ৪ ও ৫ জুন পরপর দুদিন দরজার কবজার মতো সাজিয়ে স্বর্ণ পাচারের অভিনব চেষ্টা ধরা পড়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। প্রথম দিন ৮৭ লাখ টাকা মূল্যের এবং দ্বিতীয় দিন ৬৩ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণ ধরা পড়ে। এ দুই ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে চোরাচালান মামলাও দায়ের করা হয়। তবে তারাও ছিল স্বর্ণের ক্যারিয়ার বা বহনকারী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য জানান, চোরাই স্বর্ণসহ যাদেরকে গ্রেফতার করা হয় তারা মূলত ক্যারিয়ার বা বাহক। এসব সোনা কারা কার কাছে পাঠাচ্ছে তার বিস্তারিত কোনো তথ্য ক্যারিয়ারদের হাতে থাকে না। শুধু থাকে একটি মোবাইল নম্বর। তদন্ত সংস্থা পরে ওই মোবাইলের সূত্র ধরে সামনে এগুতে চাইলে দেখা যায়- যার নামে মোবাইল সিমটি নিবন্ধন করা হয়েছে সে অজপাড়া গায়ের কোনো এক গৃহবধূ। তাই তদন্ত করে আর সামনে যাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায়- বিদেশি মোবাইল নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করা নম্বর দিয়েছে। ওই নম্বরের নিবন্ধন বাংলাদেশে নয়। ফলে মূলহোতার বিস্তারিত তথ্য বের করা সম্ভব হয় না। ফলে ধরা যায় না স্বর্ণ চোরাচালানের মূল হোতাদের।
কম সময়ে বেশি লাভের আশায় দিন দিন সাধারণ প্রবাসীরাও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত যেসব স্বর্ণের চালান আটক করা সম্ভব হয়েছে তার সবটাই এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মাসকাট থেকে। শাহ আমানত বিমানবন্দরকে স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট হিসাবে দেশীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের চোরাকারবারিরাও ব্যবহার করছে। ভৌগলিক তথা অবস্থানগত দিক থেকে মধ্যবর্তী দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে তারা বেছে নিয়েছে চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে। এসব স্বর্ণ আকাশপথে এলেও পুনরায় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে স্থলপথে। চোরাকারবারিদের সঙ্গে বিমানবন্দর কর্মচারীদের একটি চক্র জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।