ইন্দুরকানীর পূর্ব চন্ডিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়
মাঠ ভরাট দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ
পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ১১:২২ এএম
মাটি ভরাট, ফাইল ছবি
ইন্দুরকানী উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে অবস্থিত পূর্ব চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের সরকারি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এলাকাবাসী এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিচার ও তদন্ত দাবি করে একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন।
সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে ডোবা, জলাশয় ও নিচু জমির অধিকাংশ স্থানে বালু দিয়ে ভরাট না করে নতুন বিদ্যালয় ভবনের চার পাশে সামান্য কিছু বালু ফেলা হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। বাকি স্থান বর্ষা হলেই থৈ থৈ আকার ধারণ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, মাঠটি সম্পূর্ণ বালু দিয়ে ভরাট হলে শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর খেলার মাঠ তৈরি হতো।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, স্থানীয় সংসদ-সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু চলতি অর্থবছরের মার্চ মাসে এ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। সে অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে বিদ্যালয় ব্যস্থাপনা কমিটি। পরবর্তীতে মাঠ ভরাটের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাগজপত্রে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির ওই ভুয়া কাগজপত্রে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেবা আক্তারকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি খানমকে প্রকল্প সেক্রেটারি, সমাজসেবক হিসাবে মো. মিরাজুল ইসলাম ও ফিরোজ হোসেনের নাম জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে এ জালিয়াত চক্রের প্রধান সরকারি অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত এবং চন্ডিপুর ইউপির তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মিরাজুল ইসলাম (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য) তার স্ত্রী রেবা আক্তার এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুবাদে মিরাজুল সব সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয়ের সভার কার্য বিবরণী বই তার মাধ্যমে গোপনে বাইরে নিয়ে ফটোকপি করে নিজে (মিরাজুল ইসলাম) এবং নিজের স্ত্রী রেবা আক্তারসহ কয়েক জনের নাম জাল স্বাক্ষর করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে জমা দিয়ে প্রথম কিস্তির অর্ধ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম (পিআইও) এ প্রতিনিধিকে জানান, তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎকারী মিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন চাপের মুখে পড়ে আত্মসাৎ করা ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিতে পিআইও অফিসে এসেও জমা দিতে পারেননি। অভিযুক্ত মিরাজুল ইসলাম জানান, ‘আমি বালু ভরাট প্রকল্পের আইন-কানুন সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। আমার স্ত্রী রেবা আক্তার (সহকারী শিক্ষক) কিভাবে প্রকল্প কমিটির সভাপতি হয়েছেন তাও আমি জানি না। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি তা বলতে পারবে।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. জাকির হোসেন জানান, ‘আমি শুনেছি বালু ভরাটের কিছু টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ে একটি শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বিধিসম্মত হবে না। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেবা আক্তার কিভাবে প্রকল্প কমিটির সভাপতি হয়েছেন তাও তিনি জানেন না। একই ভাবে মিরাজুল ইসলামও কিভাবে প্রকল্প কমিটিতে রয়েছেন সে বিষয়েও তিনি জানেন না বলে জানান।