চট্টগ্রামে বোনের সামনেই নৃশংসভাবে কুপিয়ে মো. এনায়েতুল গণি সুমন (৩৩) নামের এক গাছ ব্যবসায়ীর পুরুষাঙ্গ ও হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কালাবাদশাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত সুমনকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে। আঘাত গুরুতর হওয়ায় মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে সেখান থেকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার শরীরে দুদফা অপারেশন করা হয়েছে বলে চিকিৎসক ও স্বজনরা জানিয়েছেন।
সুমন হাটহাজারীর মাস্টার শফিউল আলমের ছেলে।
পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় লাতু মিয়ার ছেলে মো. মোহসিন এলাহী ও মোমেন এলাহী ওরফে কালু কুপিয়েছে সুমনকে। তার শরীরে শতাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় নারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে হাটহাজারী থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- মো. ইকবাল, আবদুল ছালাম ও মোমেন শাহ কালুর স্ত্রী শিবলী আক্তার। এ ঘটনায় সুমনের বড়ভাই আতাউল গনি লিটন বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত মোহসেন ও কালুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আহত সুমন স্থানীয় মোহসিন ও মোমেন এলাহী কালুর সৎবোনকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। মোহসিন ও কালুদের কাছ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় সুমনের স্ত্রী ও তার ভাইবোনরা। এছাড়াও কয়েক বছর আগে মোহসিন ও কালুদের এক ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে মোহসেন-কালুরা সুমনকে সন্দেহ করত।
এসব নিয়ে সুমন ও মোহসেন-কালুদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। মোহসিনদের ভয়ে সুমন বাড়িতে থাকতেন না। তিনি খাগড়াছড়িতে গাছের ব্যবসা করতেন। তার মা অসুস্থ হওয়ায় রোববার মাকে দেখতে বাড়িতে আসেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারে যাওয়ার সময় রাস্তায় সুমনকে একা পেয়ে মোহসিন ও কালু তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় সুমনের বোন শামসুন নাহার রনি ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলেও সন্ত্রাসীরা তার সামনেই তাকে কোপাতে থাকে।
কোপানোর সময় ভয়ে এলাকার কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেননি। পরে সুমনের বড়ভাই আতাউল গনি লিটন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। পরে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সুমনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ছালাম ও মোহসিনের ভাই ইকবাল ও তার ভাবি শিবলী আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।
রোববার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়ে দেখা যায়, ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষত-বিক্ষত সুমনের পুরো শরীর। শরীরের বিভিন্ন অংশে শতাধিক কোপ রয়েছে। ডানহাতের কবজি অনেকটা বিচ্ছিন্ন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সুমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে কয়েক দফা অপারেশন করতে হবে। রোগীর যেমন রক্তক্ষরণ হয়েছে তেমনি আঘাতগুলো গুরুতর।
সমুনের বোন শামসুন নাহার রনি জানান, সন্ত্রাসী মোহসিন ও কালুর কাছে আমার ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলাম। তারপরও রেহাই দেয়নি। শুধু কুপিয়ে গেছে। চিৎকার দিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়েছিলাম, কেউ এগিয়ে আসেনি। মারা গেছে ভেবে সুমনকে ফেলে রেখে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। আমি এর বিচার চাই।
হাটহাজারী থানার ওসি রুহুল আমিন জানান, একজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।