পাখির চোখে দেখলে নিচের রেললাইন প্রথম দর্শনে বোঝার উপায় নেই। বরং লালগালিচায় ঢাকা বিস্তীর্ণ পথ মনে হবে। তবে কাছে গেলেই দেখা মিলে রেললাইন ধরে শুকানো হচ্ছে পাকা মরিচ। অপরূপ এ সৌন্দর্য পথচারীদের মুগ্ধ করছে। এ দৃশ্য ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া রেলস্টেশন এলাকায়।
দেখলে মনে হবে রাষ্ট্রীয় কোনো অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য রেললাইনে লালগালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। মরিচ শুকিয়ে বাজারজাত করলে বাড়তি দাম পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন ভোরে বস্তায় বস্তায় মরিচ রেললাইনের ধারে নিয়ে আসেন চাষিরা। দুই পাশে ও রেললাইনের পাতের মাঝখানে মাদুর বিছিয়ে মরিচ শুকাতে দেন। পরে প্রক্রিয়াজাত শেষে সেই মরিচ যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
শুক্রবার রেললাইনের পাশে কথা হয় চাষি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাঁচা অবস্থায় মরিচের দাম কম থাকে। এ কারণে শুকিয়ে বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক নিয়ে এখানে মরিচ কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় স্টেশন এলাকা কর্মচঞ্চল থাকে।
মরিচ কিনতে আসা ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান বলেন, এ জেলার মরিচের আকার, বর্ণ ও স্বাদের কারণে চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ স্টেশন এলাকা থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মরিচ কেনাবেচা হয়। এলাকার ৭০ ভাগ কৃষকই মরিচ চাষের সঙ্গে জড়িত।
রেললাইনের ধারে মরিচ শুকাতে এসেছিলেন স্থানীয় কৃষক সারোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রতি বিঘায় এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ মণ করে ফলন পেয়েছেন। এবার মরিচের বাজারও ভালো। প্রতি মণ মরিচ ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘায় চাষে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি ভালো লাভ থাকবে।
স্টেশন এলাকা থেকে কিছুটা দক্ষিণে রুহিয়া কুজিশহর, আসানগড়সহ জেলার হরিপুর, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠে গ্রীষ্মকালীন মরিচ চাষ হয়েছে। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঁচা-পাকা মরিচ। খেত থেকে তুলে পাকা মরিচ রোদে শুকাতে ব্যস্ত কৃষকরা। তাদের বাড়ির উঠানজুড়ে মরিচের ঝাঁজালো ঘ্রাণ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, এ বছর দুই হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে দেশি জাতসহ বাঁশ গাইয়া, জিরা, মল্লিকা, বিন্দু, হটমাস্টারসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের মরিচের চাষ হয়েছে।