করোনার সময় মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে কোটি টাকার সম্পদ গড়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে’র বিরুদ্ধে। সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন কিশোর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সড়ক ও বাস কাউন্টার থেকে চাঁদাবাজি এবং মালিক সমিতি থেকে অর্থ আত্মসাতের। অন্য বাস মালিকদের ব্যবসায় মন্দাভাব থাকলেও কিশোর বরিশাল নগরে কিনেছেন দুটি ফ্ল্যাট, গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি।
নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র হওয়ার পর ২০১৯ সালে প্রথমে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান কিশোর। তখন মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব আহম্মেদ ছিলেন ওই কমিটিরও সভাপতি। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন করে কমিটি করার সময় সভাপতি করা হয় গোলাম মাসরেক বাবলু ও কিশোর হন সাধারণ সম্পাদক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টার্মিনালের দুই বাস মালিক বলেন, সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসার পরপরই কিশোর তার মালিকানাধীন অভ্যন্তরীণ রুটের শেফালী নামের একটি বাস অবৈধভাবে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিএমএফ পরিবহণের অন্তর্ভুক্ত করেন। কিছুদিন পর আরও একটি বাস ক্রয় করেন কিশোর। আরুশি নামের ওই বাসটিও ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল শুরু করে। বিএমএফ পরিবহণের নামে যে বাসগুলো চলাচল করে সেগুলো আগে টার্মিনাল ত্যাগ করার সময় খরচ বাবদ ৫শ টাকা করে দিতে হতো। পরে কিশোর তা বাড়িয়ে ট্রিপ প্রতি করেন ২ হাজার টাকা। বিষয়টিকে চাঁদাবাজি হিসেবে আখ্যা দিয়ে টার্মিনালের একাধিক বাস মালিক জানান, এই চাঁদাবাজির কারণে একবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানাও গুনতে হয়েছে কিশোরকে। এভাবে আয় হওয়া অবৈধ অর্থের সিংহভাগ যেত তারই পকেটে।
সাবেক বাস মালিক আওলাদ হোসেন বলেন, অবৈধ পন্থা আর ক্ষমতা ব্যবহার করে ৬ মাস যেতে না যেতেই অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন কিশোর। পদ পাওয়ার আগে তার এ রকম অঢেল আয় হতো না। অভ্যন্তরীণ রুটের বাস ব্যবসায়ও ছিল মন্দাভাব। গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ৬ মাসের মধ্যে সে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। তার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে শুনেছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে ১৬ শতক জমিও কিনেছেন কিশোর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবহণ কাউন্টার থেকে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে দূরপাল্লার রুটের বাসগুলোকে অর্থের বিনিময়ে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহণের সুযোগ করে দেন কিশোর। বাস চেকারের পদগুলোতে নিজস্ব লোক বসিয়ে এই সুযোগ করে দেন তিনি।
এভাবে নানা উপায়ে অবৈধ আয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে নগরীর বিএম কলেজ রোডে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সড়কে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবনে প্রায় দেড় কোটি টাকায় দুটি ফ্ল্যাট কেনেন কিশোর। রয়েছে চারটি বাস।
সম্প্রতি দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে ১৫টি পরিবহণ কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কিশোরের বিরুদ্ধে। সবশেষ ঈদের সময় সড়কে যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কথা বলে পৃথক তিনটি স্লিপে কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগও ওঠে কিশোর কুমার দে’র বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোর কুমার বলেন, ‘ভারতে যে সম্পদ গড়ার বিষয় বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি মিথ্যা। ব্যবসা করে সম্পদ গড়েছি। অবৈধভাবে নয়। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই।’