ছিনতাইকারী সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা, ইউপি সদস্য আটক
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ০৭:০৩ পিএম
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে ছিনতাইকারী সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। নিহত দুলাল মিয়া (৫৫) কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের পাড়ারটেক গ্রামের মৃত বিল্লাল মিয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় ইউপি সদস্য মাহবুবকে (৪০) আটক করেছে থানা পুলিশ। তিনি উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য। একই ইউনিয়নের বর্তুল গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে তিনি।
শনিবার দুপুরে কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান নিহত ও আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের বর্তুল গ্রামে লাগোয়া পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের আগলা গ্রামে সোহেলের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে রূপগঞ্জের জিন্দা এলাকার রায়হান ও সাইদুল মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে বর্তুল গ্রামের নির্জনস্থানে তাদের পথরোধ করে আগলা গ্রামের সোহেল, তার ছেলে শান্ত ও পাড়ারটেক গ্রামের দুলাল।
এ সময় তাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে সোহেলের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে সেখানে মাহবুব মেম্বারের নেতৃত্বে তার লোকজন দুলালকে পেয়ে ছিনতাইকারী সন্দেহে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।
তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক শাফেয়ী আলম তার অবস্থার অবনতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে দুলালের মৃত্যু হয়।
দুলালের বড় ছেলে আলামিন (২৫) বলেন, আমার বাবা সোহেল মামার বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে বাবাকে দেখে ওই এলাকার মাহবুব মেম্বার উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তার ছোট ভাই হাবীব, শ্যালক রানা, প্রতিবেশী ফরহাদ ও মাসুদ ছিনতাইকারী সন্দেহে দেশী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা তিন ভাই ও এক বোন এখন এতিম হয়ে গেলাম। মাহবুব মেম্বার আমাদের এতিম বানিয়ে দিয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
সোহেলের স্ত্রী প্রত্যাক্ষদর্শী শাহনাজ বেগম বলেন, রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা দিকে মাহবুব মেম্বার, তার ভাই হাবীব, শ্যালক রানা, প্রতিবেশী ফরহাদসহ ৮-১০ জন লোক বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা সোহেল ও আমার ছেলে শান্তকে খোঁজাখুঁজি করে। তাদের না পেয়ে তারা বাড়ির জিনিসপত্র ভাংচুর করে এবং বাড়ির অন্য সদস্যদের উঠিয়ে নিয়ে যেতে বলে মাহবুব মেম্বার।
তিনি আরও বলেন, আমার ভগ্নিপতি দুলালকে শান্তর ঘরে শুয়ে থাকতে দেখে ছিনতাইকারী বলে এলোপাতাড়ি মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তারা বাড়ির লোহার গেইট, ঘরের টিন ও দরজা-জানালা ভাংচুর করে। এরপর আমি আর কিছু জানি না, পরে শুনি দুলাভাই মারা গেছেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি ফায়েজুর রহমান বলেন, লাশের প্রাথমিক সুরতহাল করা হয়েছে। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে একাধিক আঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, রাতে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে এমন ঘটনা ঘটেছে খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে মাহবুব মেম্বারকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। মামলা তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।