বিয়েতে সমাধান, পুলিশে চাকরি হচ্ছে তার
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৬ পিএম
অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর অবশেষে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি হচ্ছে ধামরাইয়ের বহুল আলোচিত সেই ধর্ষকের। ধর্ষণের দায় এড়াতে শেষমেশ ধর্ষিতার সঙ্গেই বিয়ে হয়েছে তার। তবে পুলিশের চাকরি পেতে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয় সেজন্য কাবিন রেজিস্ট্রি না করে মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে।
ধর্ষিতার পরিবারকে ম্যানেজ করতে ধর্ষিতার নামে ধর্ষকের পরিবার ১০ শতাংশ জমি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এসবই হয়েছে গ্রাম্য সালিশি বৈঠকে। এ সালিশ বৈঠক করেছেন রোয়াইল ইউপি মেম্বার ইয়াকুন আলী মোল্লা, মাতবর আব্দুল হক মোল্লা, আনোয়ার হোসেন মোল্লা, বকুল হোসেন মোল্লা ও ধর্ষকের বড় ভাই বেলায়েত হোসেন মোল্লা।
পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল পদে চাকরি চূড়ান্ত। ২ মে টাঙ্গাইল মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেইনিংয়ে যোগদান করার কথা। শুধু এ দাপটেই দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে ধামরাই থানাধীন রোয়াইল ইউনিয়নের ফড়িংগা গ্রামের হান্নান খান।
ধর্ষিতার বড় বোন ও তার পরিবার অভিযোগ লিখে পুলিশে ধরনা দিয়েও প্রতিকার না পেয়ে শেষপর্যন্ত চাপের মুখে সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হওয়া বোনকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিতে সম্মত হয়েছেন। বিয়ের ব্যাপারে ধর্ষিতার মতামত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ধামরাই থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, তিনি এসবের কিছুই জানেন না বা তাকে জানানো হয়নি।
পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়াহিদ পারভেজ বলেছেন, তিনি ঢাকায় ছিলেন বিধায় এসব বিষয়ে জানেন না।
এ বিষয়ে পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে অভিযুক্ত হান্নান খান ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর বোনের লেখা অভিযোগপত্রে জানা যায়, হান্নান দীর্ঘদিন ধরে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে বিরক্ত করে আসছিল। ভয়ে ওই ছাত্রী বিগত পাঁচ মাস স্কুলে যায়নি। এরপর হান্নান ওই ছাত্রীর ফোন নম্বরে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় ও এডিট করা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
সর্বশেষ কৌশলে ওই ছাত্রীকে স্থানীয় সিতি আলাদীন পার্কের সামনে যেতে বলে এবং সব ছবি দিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। সে অনুযায়ী ওই ছাত্রী পার্কের সামনে গেলে তাকে নিয়ে ধর্ষক টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করে ও পার্কের ভিতরের রেস্ট হাউজের ৩০৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে চলে যায়।
খবর পেয়ে ধর্ষিতার বড় বোন ঘটনাস্থল থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করে বাড়ি নিয়ে আসে। আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে ধর্ষিতার বড় বোন একটি জেনারেল ডায়েরি লিখে ও স্থানীয় বিট পুলিশ কর্মকর্তা ফয়েজ আহাম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী মোল্লা ও মাতরর মো. আনোয়ার মোল্লাসহ অন্যরা তরুণীর পরিবারকে সালিশি মীমাংসায় যেতে চাপ দেয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে বুধবার রাতে গ্রাম্য সালিশে হান্নানের পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ নগদ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া ধর্ষিতা কিশোরীকে ১০ শতাংশ জমি লিখে দিয়ে আপাতত বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি বাকি রাখা হবে। পরবর্তীতে হান্নানের চাকরি হয়ে গেলে বিভাগীয় অনুমতি নিয়ে বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রিসহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত হান্নানের বড় ভাই মো. বেলায়েত খান স্থানীয় সাংবাদিককে জানিয়েছেন, তার ছোট ভাইয়ের পুলিশে নতুন চাকরি হয়েছে। ৭ এপ্রিল তার ভেরিফিকেশন রিপোর্টের জন্য তদন্ত করেছেন ধামরাই থানার এসআই নাসির উদ্দিন আহমেদ। ঈদের পর টাঙ্গাইল মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে যোগদান করার কথা।
তিনি আরও জানান, দুজনের বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন আপাতত একজন মসজিদের ইমাম দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে রাখা হবে। ট্রেনিং শেষে যখন বিয়ের অনুমতি মিলবে তখন কাবিন রেজিস্ট্রিসহ ঘটা করে বিয়ের সব কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।