তানোরের ইউএনও-ইউপি চেয়ারম্যানের নামে মামলা
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪৪ পিএম
রাজশাহীর তানোর উপজেলার একটি ইজারা দেওয়া সরকারি পুকুর ভরাট করে ৩০ লাখ টাকা বাণিজ্য করার অভিযোগে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলায় তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ, সরনজাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক খান এবং ইউপি সচিব মোস্তাক আলীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি করা হয়েছে বুধবার রাজশাহীর স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। বিচারক পরিবেশ অধিদপ্তরকে ১৫ মে’র মধ্যে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদীর নাম জালাল উদ্দিন সরকার। তিনি জেলা জজ আদালতের একজন আইনজীবী। তানোরের সরনজাই গ্রামে তার বাড়ি।
জালাল উদ্দিন সরকার দশমিক ২২ একরের ওই সরকারি পুকুরটি উপজেলা ভূমি অফিস থেকে এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছিলেন। আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইজারার মেয়াদ বহাল আছে। কিন্তু সেই পুকুরটি এখন আর নেই। পুকুর ভরাট ভূমি আইনে নিষিদ্ধ হলেও ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গত ডিসেম্বরে সরনজাই গ্রামের এই পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ফলে পুকুর ইজারা ও মাছ চাষে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। ইজারা গ্রহীতার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে বাদী জালাল উদ্দিন সরকার বলেছেন, পুকুর ইজারা নিয়ে তিনি মাছ চাষ করেন। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক খান তাকে মাছ ধরে নেওয়ার নির্দেশনা দেন। চেয়ারম্যান তাকে জানান- ইউএনও পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ পুকুরটি ভরাট করার জন্য তাকে অনুমতি দিয়েছেন। পরে জালাল উদ্দিন ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এরপর তিনি জানতে পারেন, ইউএনওর নির্দেশে চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব লোকজন নিয়ে পুকুরটি ভরাট করছেন।
চেয়ারম্যান তাকে জানান, পুকুরের জায়গায় হাট বসানো হবে এবং দোকানপাট করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর তারা ২৪ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পুকুরটি ভরাট করে ফেলেন। এই পুকুর ভরাটের কারণে তার লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। পরে তিনি জানতে পারেন, পুকুর ভরাটের পর সেখানে প্রায় ৭০টি দোকান করে বরাদ্দ দেওয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলা হয়েছে। প্রত্যেক দোকানের জন্য প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার করে অন্তত ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ টাকা আসামিরা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার বাদী জানান, এই পুকুর ভরাটের কারণে তিনি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তেমনি এলাকার পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবেশ আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই বুধবার রাজশাহীর স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি মামলা করেছেন। তার পক্ষে মামলাটি ফাইলিং করেছেন আইনজীবী হাবিবুর রহমান হাসিবুল। মামলার আগামী ধার্য তারিখ ১৫ মে। আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম এই তারিখের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শককে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার বিকালে সরনজাই ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক খানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে আবার ফোন করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ইউএনও পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, তিনি এ মামলার বিষয়ে কিছু জানেন না। পুকুর ভরাটের বিষয়ে ইজারা গ্রহীতা আগে তাকে কিছু জানাননি বলেও দাবি করেন ইউএনও। আর তিনি পুকুর ভরাটের আদেশও দেননি। তবে মামলার বাদীর দাবি তিনি ইউএনওর কাছে আবেদন করেছিলেন পুকুর ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা নিতে। মামলার সঙ্গে সেই কাগজও দেওয়া হয়েছে।