Logo
Logo
×

সারাদেশ

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন যবিপ্রবির নির্যাতিত শিক্ষার্থী, অভিযুক্তরা অধরা

Icon

যশোর ব্যুরো

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:২০ পিএম

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন যবিপ্রবির নির্যাতিত শিক্ষার্থী, অভিযুক্তরা অধরা

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলের কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতনের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। নির্যাতনের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন তিন দিনেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। শ্রেণিকক্ষেও ফিরতে পারছেন না। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে ফিরেছি। তবে সুস্থ হতে পারিনি। পুরোপুরি শয্যাশায়ী অবস্থায় আছি। মাথা ও পিঠে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। ক্লাস চললেও আমি ক্লাসে ফিরতে পারছি না। অথচ নির্যাতনকারীদের কেউ এখনো গ্রেফতার হলো না। এটা ভেবেই আরও কষ্ট পাচ্ছি। অবিলম্বে নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

জানা যায়, গত রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসমাইল হোসেন তার বিভাগ থেকে ডেকে আবাসিক হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে চার ঘণ্টা ধরে ছাত্রলীগের দুই কর্মী শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান নির্যাতন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অচেতন অবস্থায় ইসমাইলকে উদ্ধার করে রাত ১০টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতিত ইসমাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পলাশপুর গ্রামে।

এ ঘটনায় পরদিন সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান জাহিদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সালমান এম রহমান ও শোয়েব আলীকে আসামি করা হয়েছে। যদিও মামলা দায়েরের আগেই অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

বুধবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খান মাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মামলার এজাহারভুক্ত দুইজন আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তারা তাদের অবস্থান দ্রুত পরিবর্তন করছে। আশা করছি, দ্রুতই আমরা তাদের গ্রেফতার করতে পারব।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, যবিপ্রবি সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ও শোয়েব এনএফটি বিভাগের ইসমাইল হোসেনের কাছে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার ইসমাইলকে বিভাগ থেকে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের পঞ্চম তলার ৫২৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে পূর্বের দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাকে খুন করার হুমকি দিতে থাকে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইসমাইলকে চার ঘণ্টা কক্ষের ভেতরে আটকে রেখে বেল্ট, লোহার রড ও পাইপ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিট ও জখম করে। 

এ বিষয়ে প্রভোস্ট আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, নির্যাতনের শিকার ইসমাইল হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীর বিচার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনের কপি দিয়ে উপাচার্য থানায় নিয়মিত মামলা করার জন্য প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আমাকে নির্দেশ দেন। এরপর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ওই শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ইসমাইল যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্যের মোড়ে একটি ছাত্রাবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন শোয়েব আলী ও সালমান এম রহমান। ইসমাইল দিতে অস্বীকার করলে রোববার দুপুরে বিভাগে পাঠদান চলাকালে শোয়েব ও সালমান তাকে ডেকে হলের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইসমাইলকে বেঁধে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম