রূপগঞ্জে লোকসানে বন্ধ ১,৩৮৭ পোলট্রি খামার
এ হাই মিলন, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩০ পিএম
পোলট্রি ফিডসহ আনুষঙ্গিক নানা উপকরণের দাম বাড়ায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ বছরে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার পোলট্রি খামার। বাকিগুলোও লোকসানের মুখে বন্ধের পথে।
অভিযোগ রয়েছে, খামারিরা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করলেও লাভের অংশ যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েও তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
খাদ্যর দাম বৃদ্ধি, জনবল সংকটসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে খামারিরা দাবি করছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে খামার ছিল ৩ হাজার ২৯৩টি। এখন টিকে রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৯০৬টি। অর্থাৎ ১ হাজার ৩৮৭টি খামার এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
কথা হয় ভুলতা ইউনিয়নের হাটাব এলাকার খালেদ মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, ২০০৬ সালে নিজ বাড়িতে ২ হাজার ব্রয়লার বাচ্চা নিয়ে ছোট পরিসরে খামার শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি ব্যবসায় লাভবান হতে থাকেন। পরে তিনি একে একে আরও ৫টি খামারে ৫ হাজার মুরগির সেট তৈরি করেন। ৩টি খামারে তিনি ব্রয়লার এবং ২টিতে সোনালি মুরগি তোলেন। কিন্তু খাদ্য ও ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাকে লোকসানে পড়তে হয়। তাই একে একে তিনি ৪টি খামারই বন্ধ করে দিয়েছেন।
একই এলাকার মোতালিব ভূইয়া জানান, ২০০১ সালে নিজ বাড়িতে ৫০০ ব্রয়লার বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। পরে তিনি ২ হাজার মুরগির সেট করেন। তিনিও একই কারণে ৬ মাস আগে খামারটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুরের আওয়াল মিয়া জানান, তিনি ২ হাজার লেয়ার বাচ্চা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরে তিনি ব্যাংক ও সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে সোনালি ও লেয়ার মিলিয়ে ২০ হাজার মুরগির সেট তৈরি করে বাচ্চা তোলেন। গত বছর তিনিও একই কারণে একে একে খামার বন্ধ করে দেন।
শুধু খালেদ মোল্লা, টিপু সুলতান নন, আওয়াল মিয়াও যুগান্তরকে বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ বছরে ১ হাজার ৩৮৭টি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। দফায় দফায় পোলট্রি ফিডের দাম বাড়ায় লোকসান গুনছেন খামারিরা। খামারিদের অভিযোগ, মুরগির বাচ্চা উৎপাদন কোম্পানিদের সিন্ডিকেট রয়েছে। এছাড়াও বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই খাতে বিনিয়োগ করায় ছোট খামারিরা টিকতে পারছেন না।
ভুলতা ইউনিয়নের ওষুধ বিক্রেতা সাইদুর বলেন, এক বছরের ব্যবধানে মুরগির খাবার ও ফার্মের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। কয়েক বছর আগে মুরগির খাবারের বস্তার দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা। বর্তমানে সেই খাবারের বস্তা ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এক বছর আগেও কুড়া বা তুষের বস্তা ছিল ২০০ টাকা করে, বর্তমানে সেই বস্তা ৬০০ টাকা। রাইস পলিশ ২৬ টাকার জায়গায় বিক্রি করছি ৩৪ টাকায়। সয়াবিন ৩৫ টাকার জায়গায় বিক্রি করছি ৮৬ টাকায়। আগে যেখানে ভুট্টার কেজি ছিল ১৭ টাকা, বর্তমানে সেটি ৩৭ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এসব কারণে অনেক ছোট খামারি ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে আমাদের ব্যবসাও ছোট হয়ে আসছে। আমরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
ভোলাব ইউনিয়নের বাসুন্দা এলাকার শরিফ মিয়া বলেন, আমার খামারে বর্তমানে ৫ হাজার ১৮০টি লেয়ার মুরগি আছে। প্রতিদিন ৪ হাজার ডিম পাওয়া যায়। বর্তমানে একটি ডিমের মূল্য ১১ টাকা। এরপরও ২/৩ বছর আগে ভালো ছিলাম, তখন ৫-৭ টাকায় ডিম বিক্রি করতাম। এখন ১১ টাকা পিস ডিম বিক্রি করেও লাভের মুখ দেখতে পারছি না।
এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এক বছর আগেও মুরগির খাবার ফিডের দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা, বর্তমানে সেই ফিডের দাম ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়াও সব ওষুধের দামও দ্বিগুণ হয়েছে। আগে যে শ্রমিককে মাসে দিতাম ৩ হাজার টাকা, এখন তাকে দিতে হয় ৮ হাজার টাকা। এমতাবস্থায় আমাদের টিকে থাকাটাই মুশকিল।
উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ডা. মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, পোলট্রি খাবারের দাম ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ছোট খামারিরা এখন আর টিকে থাকতে পারছেন না।