লাঙ্গলবন্দে উৎসবমুখর পরিবেশে অষ্টমীর স্নান
বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩৫ পিএম
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নারায়ণগঞ্জের বন্দরের লাঙ্গলবন্দে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে দুই দিনব্যাপী অষ্টমী স্নানোৎসব। ‘হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’ এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপমোচনের আশায় দেশ-বিদেশের প্রায় ১০ লাখেরও বেশি পুণ্যার্থী এবার আদি ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানে অংশ নেন। স্নানের সময় ফুল, বেলপাতা, ধান, দুর্বা, হরিতকি, ডাব ও আমপাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে অর্পণ করেন পুণ্যার্থীরা।
গত মঙ্গলবার স্নানের লগ্ন শুরু হয় রাত ৯টা ১৮ মিনিটে। লগ্ন শুরুর পর পুণ্যার্থীদের ঢল নামে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে। এ সময় প্রচুরসংখ্যক পুণ্যার্থীর আগমনে সরগরম হয়ে উঠে তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দ। লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটারজুড়ে তিলধারণের জায়গা ছিল না।
১৮টি স্নানঘাটে দল বেঁধে, সপরিবারে কেউবা এককভাবে ধর্মীয় রীতিরেওয়াজ অনুযায়ী স্নানে অংশগ্রহণ করেন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা। প্রতিটি স্নানঘাটেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে রাজঘাট ও গান্ধীঘাটে পুণ্যার্থীদের সমাগম চোখের পড়ার মতো।
স্নানের আয়োজক শিখন সরকার জানান, এবার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে স্নানোৎসব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী স্নানে অংশ নিয়েছেন। চৈত্র মাসের শুক্লা তিথিতে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয় ও ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়।
এদিকে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে স্নানোৎসবের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সেলিম ওসমান।
তিনি বলেন, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নে দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে আধুনিক গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে একসঙ্গে পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং করা যাচ্ছে। পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য ডরমিটরি ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সুষ্টুভাবে স্নান সম্পাদনের জন্য ১৮টি স্নানঘাটের নির্মাণও চলমান। এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে লাঙ্গলবন্দ।
স্নান উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সরোজ কুমার সাহার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল, জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম কুদরত-এ খুদাসহ স্নান উদযাপন পরিষদের নেতারা।
মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৮ মিনিটে শুরু হওয়া এই পুণ্যস্নান শেষ হয় বুধবার রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে। অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান পুণ্যার্থীদের মধ্যে খাবার সরবরাহ ও নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। স্বাস্থ্যসেবায় ছিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক মেডিকেল টিম।