শহীদুল ইসলাম একজন চা বিক্রেতা, মা গৃহিণী। পরিবারে রয়েছে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। একমাত্র ছেলে শরীফ স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে।
কিন্তু শরীফ আজ ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে দুঃস্বপ্নে দিন কাটছে। সে বাঁচতে চায়। মমতাময়ী মা একমাত্র ছেলের পাশে থেকে অশ্রুসজল দুচোখে নির্বাকের মতো চেয়ে থাকেন। আর দরিদ্র নিরক্ষর বাবা ছেলেকে বাঁচাতে সাহায্য প্রাপ্তির আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে দুহাত বাড়িয়ে ভিক্ষে চাইছেন।
তাহলে কি মা-বাবার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে! আমি কি আর কোনো দিন স্কুলে সহপাঠীদের সঙ্গে বসে বই পড়তে পারব না! খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারব না! এ কথাগুলো শরীফের মনের কথা।
শরীফ নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া পৌরসভার সায়মা শাহজাহান একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা চা বিক্রেতা শহীদুল ইসলাম কেন্দুয়া পৌরসভার দিগদাইর গ্রামের বাসিন্দা।
শরীফের বাবা শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রথমে শরীফের একটি চোখে সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাকে কিশোরগঞ্জ চোখের চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেলে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন অধ্যাপক মো. আমিনুল হক আকন্দ কর্তৃক চোখসহ মাথায় বিভিন্ন পরীক্ষায় উঠে আসে শরীফের ব্রেন টিউমারের চিত্র।
পরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শরীফকে ময়মনসিংহ নিয়ে গিয়ে ব্রেন ও স্পাইন বিশেষজ্ঞ মো. হারুন-অর-রশিদের নির্দেশনায় উন্নত পরীক্ষার নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্রেন টিউমারের বিষয়টিই ধরা পড়ে। ১ মার্চ তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শরীফের বাবা শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ডাক্তার বলেছেন শরীফের ব্রেন টিউমার চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা গরিব অসহায় মানুষ; এত টাকা কোথায় পাব। তাই একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
এদিকে শরীফের মা রুজিনা আক্তার বলেন, শরীফ বাঁচতে চায়। তার ইচ্ছা ছিল এসএসসি পাস করে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হওয়া। কিন্তু ছেলের মাথায় ব্রেন টিউমার দেখা দেয়ায় লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই চিকিৎসায় অনেক টাকা লাগে। ছেলের বাবা চা বিক্রি করে যে টাকা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। তার ওপর ছেলের চিকিৎসা সব মিলিয়ে আমরা চরম হতাশাগ্রস্ত।
শরীফের মা রুজিনা আক্তার সমাজের বিত্তবান দানশীল মানুষদের কাছে আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি আরও বলেন, সবাই সহযোগিতা করলে উন্নত চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে আমার ছেলে বেঁচে থাকবে। আবার লেখাপড়া করবে। মহান আল্লাহর রহমতে স্বপ্নটুকুও হয়তো জিইয়ে থাকবে।