Logo
Logo
×

সারাদেশ

ময়লা ফেলে নাসিক ভবন ঘেরাও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের

Icon

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৩, ১১:০১ পিএম

ময়লা ফেলে নাসিক ভবন ঘেরাও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের

বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে ময়লা ফেলে নগর ভবন ঘেরাও করেছেন শত শত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। এ সময় নাসিকের কর্মকর্তাসহ মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।

মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বেলা ১১টা থেকে প্রায় ৫ শতাধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী ঝাড়ু নিয়ে নগর ভবনে অবস্থান নেন এবং বিপুল পরিমাণ ময়লা আবর্জনা ফেলে নগর ভবন ঘেরাও করেন। এ সময় তারা নগর ভবনে রাখা নাসিকের কর্মকর্তাদের গাড়িতেও ময়লা নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা।

বিকাল সোয়া ৪টায় সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লাসহ অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরায় নগর ভবন ত্যাগ করেন মেয়র আইভী।

এদিকে নগর ভবনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ময়লা ফেলে বিক্ষোভ করায় চরম ক্ষুব্ধ হন মেয়র আইভী। তিনি সেখানে আন্দোলনরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে বলেন, তোরা ভাত খাইতে পাস না, আবার দামি মোবাইল পাইলি কেমনে? তোমরা অস্থায়ী, বাংলাদেশ সরকার তোমাদের চাকরি স্থায়ী করে নাই। আমার মন চাইলে তোমাদের রাখতে পারি, মন না চাইলে রাখমু না। তোমাদের এখানে ময়লা ফেলার দুঃসাহস কে দিল?

এ সময় স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী তৌকির রাসেল মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার সময় মেয়র আইভী তাকেও তুই-তোকারি করেন। মেয়র আইভীর এমন বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে সেখান থেকে দৌড়ে কার্যালয়ে অভ্যন্তরে পালিয়ে রক্ষা পান কনজারভেন্সি সুপার ভাইজার শ্যামল চন্দ্র পাল ও মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেন।

আন্দোলনরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে মোট ১ হাজার ২শ পরিচ্ছন্নতাকর্মী পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ১ বছর আগেই সিটি করপোরেশন এই পরিচ্ছন্নকর্মীদের তাদের আধুনিক বাসস্থানের আশ্বাস দিয়ে তাদের আদি বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করে; কিন্তু এই ১ হাজার ২শ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মধ্যে মাত্র দেড়শ থেকে ২শর মতো কর্মীদের তারা নতুন বাসস্থানে স্থানান্তর করেছেন। যাদের সেখানে নেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে ঘরভাড়া বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে; কিন্তু বর্ধিত বেতন পাননি কেউই।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২২নং ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কর্মী উমা রানী দাস বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাসে থাকে। কোথাও এভাবে ফ্ল্যাটে থাকার জন্য ভাড়া দিতে হয় না; কিন্তু এই মেয়র আইভী আমাদের বলে এই ভবনগুলো সরকারি টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হয়নি, বিদেশ থেকে ফান্ড এনে এই ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। তাই আমাদের মাসে পাঁচ হাজার করে ভাড়া দিতে হবে। আমরা সারা মাস কাজ করে বেতন পাই আটত্রিশ টাকা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। যদিও তিন মাস আগে আট হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে এই বেতন এখনো কার্যকর করা হয়নি। আর কার্যকর হলেও যদি বাসা ভাড়া ৫ হাজার, বিদ্যুৎ,গ্যাস বিল এক হাজার করে দিতে হয় তবে বাকি ২ হাজার টাকায় সংসার চালাব কী করে? এর মধ্যে পূজা বাবদ অগ্রিম প্রদত্ত টাকা থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়।

নগরীর ১৫ ওয়ার্ডের বাসন্তি রানী দাস বলেন, আমাদের আবাসনের ব্যবস্থা না করেই আমাদের বাপদাদার বাসস্থান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যেখানে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেবেন মেয়র, সেখানে আমাদের দাবি-দাওয়ার তোয়াক্বা না করে উল্টো আমাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে গেলেন। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।

আন্দোলন নিয়ে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কিশোর লাল যুগান্তরকে জানান, যেখানে প্রধানমন্ত্রী পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করছেন, ভাড়া বাবদ কোনো টাকা কর্তন করতে নিষেধ করেছেন, সেখানে আমাদের মেয়র বাসা ভাড়া বাবদ ৫ হাজার টাকা কেটে নিচ্ছেন। তিনি বেতন বাড়িয়েছেন শুনেছি কিন্তু অফিসিয়ালি কোনো চিঠি আমরা পাইনি এবং সেই টাকাও পাইনি। এখন তিনি বলছেন ফান্ডে টাকা নাই। অথচ সিটি করপোরেশনের আয়ের অন্যতম উৎস হলো কনজারভেন্সি ট্যাক্স বা পরিচ্ছন্নতা কর, যা আমাদের কাজের মাধ্যমে আদায় হয়। এই জনগণের কর দিয়েই আমাদের বেতন দেওয়া সম্ভব কিন্তু এই টাকা অন্য ফান্ডে খরচ করেন বলেই মেয়র আইভী এখন বলেন ফান্ডে টাকা নেই।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি না মানলে আমরা শিগগিরই কর্মবিরতির ঘোষণা দেব।

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে নগর ভবনে মেয়র আইভী পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার সময় গণমাধ্যম কর্মীরা ছবি তুলতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে যান মেয়র। সাংবাদিকদের তিনি প্রশ্ন করেন, এখানে এমন কী হয়েছে যে আসতে হবে? পরে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল দাস ও সাধারণ সম্পাদক কিশোর লালকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন।

এ সময় মেয়র আইভী বলেন, গত তিন মাস আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সচিব ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। তবে ফান্ডে টাকা না থাকায় তিন মাস ধরে কাউকেই বর্ধিত বেতন দেওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান বলেন, আসলে মেয়র আইভীকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে বিষয়টি এমন না। পরিচ্ছন্নকর্মীরা বেতনভাতাসহ ৬ দফা দাবিতে নগর ভবনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। তাকে কিছু সময়ের জন্য পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঘেরাও করেন। এ সময় তাদের সরিয়ে মেয়রকে যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়া হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম