স্বামীর ঘুসের টাকায় স্ত্রীর বাড়ি-প্লট
হোসেন চিশতী সিপলু, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৩, ০৩:২৬ পিএম
স্বামী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। চাকরির বয়স প্রায় ৩৭ বছর। এই সময়ের মধ্যে স্বামী কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
সেই টাকায় সম্পদ করেছেন তার স্ত্রীর নামে। যার একটি বাড়ি ও একটি প্লট সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমি পল্লী হাউজিং এলাকায়।
ভূমি পল্লী আবাসিক এলাকায় শুধু সরকারের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা ভবন নির্মাণ করায় এবং জমির মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় ঢাকার গুলশান অভিজাত এলাকার সঙ্গে তুলনা করেন এ অঞ্চলের লোকজন।
নিজেদের ভূমিহীন দাবি করে নিজেদের আবাসনের জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকায় সরকারি প্রায় ৩০০ একর জমি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করেন ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হওয়া ভূমি কুতুব ওসমান গণিসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু তারা ওই জমি পর্যায়ক্রমে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জের অন্যান্য জমির মূল্য কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকা হলেও ভূমি মন্ত্রণালয়ের জমি কাঠাপ্রতি বিক্রি করা হয় ৫০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা।
সাধারণদের নাগালের বাইরে থাকা ওই জমি ক্রয় করে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। যাদের একজন নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার এনায়েতনগর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. কামরুল হক।
তিনি এই ভূমি পল্লী এলাকায় ৬ কাঠা জমির ওপর ৬তলা একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি ভূমি পল্লীর প্রধান ফটকের দক্ষিণপাশে ৬ কাঠা জমির একটি প্লট ক্রয় করেন তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার পাপিয়ার নামে।
সূত্রমতে, ১৯৮৫ সালে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে চাকরিতে যোগদান করেন মো. কামরুল হক। চাকরিকালীন নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূমি কর্মচারী ও কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় চর গোয়ালদি এলাকায়। সেখানেও তিনি বিলাসবহুল একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু সেখানে তিনি থাকেন না। থাকেন নাসিক ৪ নং ওয়ার্ডস্থ সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমি পল্লীস্থ স্ত্রীর ৬তলা বাড়িতে।
এ ভূমি কর্মকর্তার বাবা সাহাব উদ্দিনের এলাকায় টেইলার্সের দোকান ছিল। সন্তানদের লেখাপড়া করানো ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তার বাবাকে। কিন্তু মো. কামরুল হক চাকরি পাওয়ার পর থেকে তাদের সংসারে আলাউদ্দিনের প্রতীপ পাওয়ার মতো সব কিছু ঘটতে থাকে।
এ বিষয়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. কামরুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রি করে এ বাড়ি ও সম্পদ করেছেন। তবে গ্রামের বাড়ির কত বিঘা বা কি পরিমাণ জমি বিক্রি করেছেন, সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারেননি। স্ত্রীর নামে বাংকে ৫ কোটি টাকারও বেশি এফডিআর রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।