বগুড়ার নন্দীগ্রামে চার বছরের অবুঝ শিশু মুনিম হোসেন হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।
পরিবারের সাথে পূর্ব বিরোধের জেরে শিশুটিকে ডেকে নিয়ে ইটের আঘাতে মাথা থেতলিয়ে হত্যা করা হয়। গুম করতে লাশ টয়লেটের কূপে ফেলে দিয়ে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।
শুক্রবার রাতে গ্রেফতার আসামি প্রতিবেশী আমিনুল ইসলাম (২০) পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। পরে তার দেখানো মতে হত্যায় ব্যবহৃত ইট, রক্তমাখা জামা-কাপড় ও দুটি বাঁশ উদ্ধার করা হয়। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি রেকর্ডের জন্য শনিবার বিকালে তাকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। নন্দীগ্রাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন এ তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ, এজাহার সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, শিশু মুনিম হোসেন বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়নের ছোট চাঙ্গুইর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে। তিনি স্থানীয় ভেবরকুড়ি মিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। শিশু মুনিম ১৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ৮টার দিকে মায়ের কাছে সিদ্ধ মিস্টি আলু খায়।
এরপর সে খেলনা রিকশা নিয়ে বাড়ির বাহিরে গিয়ে নিখোঁজ হয়। প্রায় সাড়ে ৩ঘন্টা পর প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলামের বাড়ির পাশে বাঁশঝাঁড়ে টয়লেটের কূপে তার লাশ পাওয়া যায়। তার গলা ও মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
পরদিন শিশুর বাবা স্কুল শিক্ষক ইদ্রিস আলী নন্দীগ্রাম থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন। মামলার পর পুলিশী তদন্তে প্রতিবেশী আনসার আলী প্রামানিকের ছেলে আমিনুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
শুক্রবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি শিশু মুনিম হোসেনকে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতিবেশী আশরাফ আলীদের সাথে তাদের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। ইদ্রিস আলী মাস্টার প্রতিবেশী আশরাফ আলীদের পক্ষে অবস্থান নেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং প্রতিশোধ নিতেই শিশু মুনিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বাড়ির সামনে রাস্তায় খেলনা রিকশাসহ শিশুটিকে কৌশলে পোস্ট অফিসের দিকে নিয়ে যান।
একটি বাড়ির পিছনে নিয়ে টয়লেটের পাশ থেকে ভাঙ্গা ইট দিয়ে মুনিমের মাথার পিছনে আঘাত করে। এতে শিশু মুনিম মারা গেলে তাকে কোলে করে জাহিদুল ইসলামের বাড়ির পেছনে বাঁশঝাঁড়ে নিয়ে যান। সেখানে টয়লেটের কূপে ফেলে দেন। এরপর পাতা দিয়ে লাশ ঢেকে দিলেও পা বের হয়েছিল। পরবর্তীতে শিশুর বোন তাবাচ্ছুম পা দেখেই মুনিমের লাশ শনাক্ত করেন।
নন্দীগ্রাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, একমাত্র আসামি আমিনুল ইসলাম শিশু মুনিমকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তার দেখানো মতে শিশুর খেলনা রিকশা, ভাঙ্গা ইট ও বাঁশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বীকারোক্তি রেকর্ডের জন্য শনিবার বিকালে আমিনুল ইসলামকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়নি।