Logo
Logo
×

সারাদেশ

এরশাদ শিকদারের সেই আলোচিত বাড়ি ভাঙা দেখতে মানুষের ভিড়

Icon

নূর ইসলাম রকি, খুলনা 

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০০ পিএম

এরশাদ শিকদারের সেই আলোচিত বাড়ি ভাঙা দেখতে মানুষের ভিড়

প্রায় ৬০টি খুনের আসামি বিখ্যাত সন্ত্রাসী খুলনার এরশাদ শিকদারের বিলাসবহুল বাড়ি ‘স্বর্ণকমল’ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। উৎসুক জনতা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভেঙে ফেলার কাজ দেখছেন এবং ছবি তুলছেন।

বুধবার সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গা মজিদ সরণিতে অবস্থিত বাড়ির সামনে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। এই বাড়ি নিয়ে যুগ যুগ ধরেই ছিল নানান রহস্য।

প্রচারণা রয়েছে- বাড়ির বিভিন্ন গোপন স্থানে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুকানো রয়েছে। এমনকি বাড়ি নির্মাণ কাজে যে শ্রমিক ও মিস্ত্রি ছিল তাদের অঙ্গহানিসহ প্রাণও নিয়ে নিয়েছিল এরশাদ শিকদার।

এরশাদ শিকদারের বহু অপকর্মের সাক্ষী এই স্বর্ণকমল। বাড়িটিতে গোপন কুঠরি এবং অস্ত্রভাণ্ডারের কথাও শোনা যায়। প্রায়ই জলসা বসত বাড়িটিতে। শহরের নামিদামি ব্যক্তিরা যেতেন সেখানে।

এক সময় সাধারণ মানুষের খুব আগ্রহের একটি জায়গা ছিল ‘স্বর্ণকমল’। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বাড়িটি দেখতে আসত। আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ওই বাড়িটি। এখন এই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, বাড়ির একটি অংশ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বহুতল ভবন করা হবে। তবে আশপাশের অনেকেই জানিয়েছেন, বাড়ির অর্ধেক এরশাদ শিকদারের ছেলেরা বিক্রি করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বাড়ির মালিকপক্ষের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি বাড়িটির ছবি তুলতে গেলে বাড়ির ভেতর থেকে ইট ছুড়ে মারা হয়েছে।

তবে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ জানিয়েছে, বয়রা এলাকার একজন ব্যবসায়ীর কাছে বাড়ির অর্ধেক বিক্রি করা হয়েছে, তারাই ভাঙচুরের কাজ করছে। এটা কতখানি সত্য তারা নিশ্চিত নয়।

জানা যায়, এরশাদের দুই স্ত্রী খোদেজা বেগম ও সানজিদা নাহার শোভা। এরশাদ শিকদারের তিন ছেলে রয়েছে। তারা হলেন- মনিরুজ্জামান শিকদার জামাল, কামাল শিকদার ও হেলাল শিকদার। তারা পেশায় ব্যবসায়ী। এছাড়া সুবর্না ইয়াসমিন স্বাদ ও জান্নাতুল নওরিন এশা নামে এরশাদ শিকদারের দুই মেয়ে ছিল। যার মধ্যে এশা ২০২২ সালের ৩ মার্চ আত্মহত্যা করেন।

এরশাদ শিকদারের জীবনবৃত্তান্ত

এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার বাবার নাম বন্দে আলী। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি তার জন্মস্থান নলছিটি থেকে খুলনায় চলে আসেন।

খুলনায় আসার পর এরশাদ সেখানে কিছু দিন রেলস্টেশনের কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রেললাইনের পাত চুরি করে বিক্রি করতো এমন দলের সঙ্গে যোগ দেন। পরে তিনি তাদের নিয়ে নিজেই একটি দল গঠন করেন ও এলাকায় ‘রাঙ্গা চোরা’ নামে পরিচিতি পান।

১৯৭৬-৭৭ সালে তিনি ‘রামদা বাহিনী’ নামে একটি দল গঠন করেন, যারা খুলনা রেলস্টেশন ও ঘাট এলাকায় চুরি-ডাকাতি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকত। এ রামদা বাহিনী নিয়েই এরশাদ ১৯৮২ সালে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা দখল করেন এবং এর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৮২ সালে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি তৎকালীন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের (বর্তমান ২১ নম্বর ওয়ার্ড) কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর এরশাদ শিকদার বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর এরশাদ আবারো দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কিন্তু সমালোচনার মুখে কিছু দিন পরই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময়ও তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন।

প্রায় ৬০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এরশাদ শিকদার। ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন তার বডিগার্ড নুরে আলম। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনার জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম