Logo
Logo
×

সারাদেশ

বর্জ্য সরিয়ে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ

Icon

সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে কায়েস আহমেদ সেলিম

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৪৬ পিএম

বর্জ্য সরিয়ে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ

ব্যস্ত জীবনে আনন্দ খুঁজে পেতে প্রতি বছর হাজারও মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এলাকায় ছুটে যান। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠে বাংলাদেশের অন্যতম দুটি পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন। 

স্বচ্ছ নীল জল আর সাগরের মাঝে থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকদের আগ্রহের শীর্ষে থাকে সেন্টমার্টিন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতি বছর অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে ও অসচেতনভাবে পর্যটক এবং স্থানীয়দের ফেলে দেওয়া বর্জ্যে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য। 

ভ্রমণে এসে ফেলে যাওয়া নানা রকমের ময়লা-আর্বজনাসহ প্লাস্টিক বর্জ্যে হুমকি তৈরি হয়েছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। বিশেষ করে দ্বীপের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। যদিও প্রাকৃতিক নৈসর্গের এ দ্বীপ সংরক্ষণের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান রয়েছে। তবে সবার সচেতনতা ছাড়া এসব উদ্যোগের কোনোটাই ফলপ্রসূ করা সম্ভব নয়। 

এ কারণে পর্যটক ও স্থানীয়সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সামুদ্রিক বর্জ্য পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে কোকাকোলার মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান।  কেওক্রাডং বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সমুদ্রসৈকতে কোস্টাল ক্লিনআপ কর্মসূচির আয়োজন করে চলেছে কোকাকোলা সিস্টেম বাংলাদেশ।

সম্প্রতি দ্বীপটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সামুদ্রিক বর্জ্য পরিষ্কারের এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ বছরের এই আয়োজনে ৪৫০ জনের অধিক স্বেচ্ছাসেবক এ ক্লিনআপ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেন। 

সেন্টমার্টিনের সমুদ্রসৈকত থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা এ বছর ১৮০০ কেজির অধিক সামুদ্রিক বর্জ্য পরিষ্কার করেন। এ সামুদ্রিক বর্জ্যের বেশিরভাগই ছিল খাদ্যের প্ল্যাস্টিক মোড়ক, প্ল্যাস্টিক বোতল, বোতলের প্ল্যাস্টিক ঢাকনা, প্ল্যাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি। 

সংশ্লিষ্টদের মতে, দ্বীপে প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু পর্যটকদের ব্যবহার করা এসব প্লাস্টিকের যথাযথ ডাম্পিং করা হয় না, যা সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশকে ব্যাপকভাবে নষ্ট করছে। একইভাবে সাগরকেন্দ্রিক নির্ভরশীলদের জীবন-জীবিকাও হুমকিতে পড়েছে। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ৬৫ প্রজাতির প্রবাল ছিল, ২০১৬ সালে যা ৪১ প্রজাতিতে নেমে এসেছে। 

দ্বীপে বিভিন্ন ধরনের শৈবাল, শামুক-ঝিনুক এবং অগণিত প্রজাতির মাছ দেখা যায়। দ্বীপটি সবুজ সাগরের কচ্ছপ, জলপাই রঙের সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রবালের জন্যও বিখ্যাত। পর্যটন মৌসুমে অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যক পর্যটকের আগমনের কারণে সরকার দ্বীপের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি রক্ষায় বিধিনিষেধ আরোপ করে বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর পরও দূষণের মাত্রা কমেনি। প্লাস্টিকসহ সামুদ্রিক বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। 

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মো. মজিবর রাহমান বলেন, সেন্টমার্টিন দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র। এ কারণে দ্বীপে প্রচুর বর্জ্য জমা হয়। এ সমস্যা হ্রাসের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন, কিন্তু এর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ। কোকাকোলা ও কেওক্রাডং বাংলাদেশের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।

এ কর্মসূচির বিষয়ে কোকাকোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা জি তুং বলেন, প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং আমরাই এ সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের নানা ধরনের উদ্যোগ আছে, তার মধ্যে এই কোস্টাল ক্লিনআপ অন্যতম। সেন্টমার্টিনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে কেওক্রাডং বাংলাদেশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।

সামুদ্রিক দূষণরোধে কাজ করে আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংগঠন ওশান কনজারভেন্সি। সংগঠনটির হয়ে বাংলাদেশে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে কেওক্রাডং বাংলাদেশ। এ কর্মসূচির বিষয়ে ওশান কনজারভেন্সির বাংলাদেশ অঞ্চলের সমন্বয়ক মুনতাসীর মামুন বলেন, এই দ্বীপকে পরিষ্কার রাখা এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের নিজের নিজের জায়গা থেকে কাজ করে যেতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই দ্বীপকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম