বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ ও নদনদীতে বর্জ্য দূষণ প্রতিরোধক সমন্বিত উদ্যোগ বিষয়ক সেমিনার
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:১৩ পিএম
‘নীতি থেকে কর্মসূচীতে উত্তরণ: বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ ও নদনদীতে বর্জ্য দূষণ প্রতিরোধক সমন্বিত উদ্যোগ’ শীর্ষক এক সেমিনার আজ ঢাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় রাজকীয় নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায়।
দিবসব্যাপী এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কামরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আলোচনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অংশগ্রহণদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ও রাজকীয় নরওয়ে সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রদূত মি. হারান এরাল্ড গুলব্রান্ডেনসেন। বিশেষ অতিথি, মি. জেরোম স্টাকি, সাকুর্লার ইকোনোমি এবং রিসোর্স এফিসিয়েন্সি ইউনিট প্রধান, ইউনিডো, ভিয়েনা, অষ্ট্রিয়া, মিঃ সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
চারটি পর্বে বিভাজিত এই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের প্লাস্টিক ও জলজ দূষণ প্রতিরোধক এই পরিবেশগত আলোচনা আয়োজনে স্বাগতিক ভাষণে প্রকল্প প্রধান, পরিবেশ অধিদপ্তর ড. আবদুল্লাহ আল মামুন ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখ অনুষ্ঠিত প্লাস্টিক দূষণ এবং জলজ বর্জ্য প্রতিরোধকল্পে অনুষ্ঠিত প্রথম স্টোকহোল্ডার সভার কথা স্মরণ করে বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের মৃত্তিকা, বায়ু ও পানিতে যে পরিমান দূষণ ঘটাচ্ছে তার কার্যকর প্রতিকার ও প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময় ও পরিবেশের দাবি।
প্রধান অতিথির ভাষণে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের নদনদীগুলোর তলদেশে স্তুপকৃত প্লাস্টিক বর্জের অপসারণ আগামী একশ বছরেও সম্ভব হবে না, কারণ ওই বর্জ্যগুলো অপচনশীল। প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনকারীদেরকে তিনি নৈতিকতা নিয়ে এই লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ, মুখ্খা, মোড়ক, র্যাপার ও প্লাস্টিকের দ্রব্যসামগ্রীর কারণে প্রাণঘাতী রোগ বিমারি বেড়েই চলেছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার। কারণ প্লাস্টিক দূষণ থেকে জন্ম নেয় মাইক্রোপ্লাস্টিক বিষক্রিয়াসহ ক্ষতিকর ও প্রাণঘাতি ডাইঅক্সিন, যা সুস্থ্য জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ। বাংলাদেশে রাজকীয় নরওয়ে সরকারের রাষ্ট্রদূত মি. হাকন এরাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন প্লাস্টিক দূষণ থেকে প্রকৃতি ও জীবনকে সুরক্ষায় উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে আলোচনার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উল্লেখ করেন যে, তরুণ পরিবেশ কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে বিপন্ন পরিবেশ এবং জলজ প্রানচক্রকে সুরক্ষায় অবদান রেখে চলেছে। আলোচনা চক্রের দ্বিতীয় পর্বে আলোচ্য ছিল প্লাস্টিক দ্বারা দূষিত প্রকৃতি সুরক্ষায় কর্ম পরিকল্পনা, যে পর্বে প্রধান সঞ্চালক ছিলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল হাসান। এই পর্বটি শুরু হয় ইউনিডো’র জাতীয় বিশেষজ্ঞ জনাব এস.এম. জি.বি. আরাফাতের একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে।
এই পর্বে সম্মানিত প্যানেল বক্তাগণ তাদের অভিজ্ঞতা এবং অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের উত্তরে প্লাস্টিক বর্জ্য জনিত দূষণের প্রতিক্রিয়া বিষদভাবে উপস্থাপন করেন। আলোচনার তৃতীয় পর্বে সঞ্চালনকারী ছিলেন ডঃ আফরিনা মাহমুদ এবং এই পর্বে বায়োমেডিকেল প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। জাতীয় বিশেষজ্ঞ এসএমজিবিআরাফাত আরেকটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা প্রদান করেন।
এই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীরা একটি ইন্টারেক্টিভ আলোচনায় যুক্ত হয়ে তাদের মতামত ও সুপারিশ প্রদান করেন। চতুর্থ এবং শেষ অধিবেশনটি পরিচালনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব জিয়াউল হক। তিনি প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্পে সম্পদ-দক্ষ পরিছন্ন উৎপাদন বিষয়ে আলোচনা করেন।
সমাপনী বক্তব্যে, ইউনিডো বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিটিভ ড. জাকি উজ জামান সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্লাস্টিক বর্জ্য এবং পানি দূষণ প্রতিরোধে আমাদের লড়াইকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ইউনিডো ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া সার্কুলার এফিসিয়েন্সি ইউনিটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অফিসার ড. রানা প্রতাপ সিং আলোচনা পর্বে মূল্যবান তথ্য সহভাগিতা করার করা জন্য সকলকে সাধুবাদ জানান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্বে কাজী সুমন, উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।