১ অক্টোবর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা হর্ন মুক্ত এলাকা ঘোষণা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম
শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি। কারণ, শব্দদূষণ বধিরতা, হৃদরোগসহ নানাবিধ স্নায়ুরোগের কারণ। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো শব্দদূষণের ফলে গর্ভস্থ শিশুদেরও স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি করে। এই ভয়াবহ দূষণ রোধকল্পে বিভিন্ন কার্যকরি পদক্ষেপ চলমান আছে।
এরই ধারাবাহিকতায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এর মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (Syeda Rizwana Hasan) এর সার্বিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বেবিচক এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া, বিইউপি, এনডিসি, এনএসডব্লিউসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি (Air Vice Marshal Md Monjur Kabir Bhuiyan, BUP, ndc, nswc, afwc, psc) আগামী ০১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার পরিবেশ সুরক্ষায় যানবাহনের হর্ন বন্ধে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ, ঢাকা ট্রাফিক, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পরিবেশ অধিদপ্তর, এপিবিএন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, শিক্ষক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থা এই সমন্বিত উদ্যোগের সক্রিয় অংশীজন হিসেবে নিজ নিজ কর্মপরিধি অনুযায়ী গৃহীত উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়ন করবেন।হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দরের দক্ষিণ দিকে লো মেরিডিয়ান থেকে উত্তর দিকে স্কলাস্টিকা ক্যাম্পাস পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তায় হর্ন বাজানো বন্ধে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিমানবন্দর এলাকাকে হর্ন মুক্ত এলাকা ঘোষণা করা; সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক স্লোগান সম্বলিত ব্যানার, বিলবোর্ড ইত্যাদি স্থাপন; লিফলেট বিতরণ; ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রম; যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ; হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে যথাযথ পার্কিং; বিআরটিএ এর মাধ্যমে গাড়ি চালক ও গাড়ির মালিকদের ক্ষুদে বার্তা দেওয়া, আইন অমান্যকারীদের জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের ব্যবস্থা করাসহ ইত্যাদি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। শব্দদূষণ রোধে হর্ন বাজানোকে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন স্থানে থাকবে, যাতে চালকগণ সহজে দেখতে পায়। রাতের বেলায় সাইনগুলো দৃশ্যমান রাখার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে ডিএনসিসি।বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি শব্দ দূষণ রোধে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সমিতির পক্ষ থেকে সকল বাস ও ট্রাক ড্রাইভারদেরকে শব্দদূষণ না করার জন্য সচেতন করার উদ্দেশ্যে বার্তা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট টার্মিনালগুলোতে শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন লিফলেট বিতরণ করা হবে। এর মাধ্যমে ট্রাক ও বাস চালকদের মধ্যে শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে, যা পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বিমানবন্দর এলাকায় যানবাহনের হর্ন বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনগণকে শব্দদূষণ হ্রাসে সক্রিয় ভূমিকা পালনের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর অংশ হিসেবে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, টেলিভিশনে স্ক্রল ও টিভিসি প্রচার এবং নির্ধারিত এলাকায় লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শব্দদূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব সংস্থা ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সর্বোচ্চ প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের মানুষকে শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানানো হবে এবং সচেতন করা হবে। টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, এবং ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে শব্দদূষণ রোধে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া, ১ অক্টোবর থেকে আগামী ৭ দিনের জন্য লো মেরিডিয়ান থেকে উত্তর দিকে স্কলাস্টিকা ক্যাম্পাস পর্যন্ত তিনটি পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে পারে। লো মেরিডিয়ান এ পরিবেশ অধিদপ্তর এর ম্যাজিস্ট্রেটগণ, বিমানবন্দরের সামনের গোলচক্করে বেবিচক এর ম্যাজিস্ট্রেটগণ এবং স্কলাস্টিকা পয়েন্টে বিআরটিএ এর ম্যাজিস্ট্রেটগণ দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ, ভলেনটিয়ার, শিক্ষার্থী ও বাস-ট্রাক মালিক সমিতির প্রতিনিধিগণ তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য থাকবে।
বিআরটিএ ঢাকা শহরের সকল ড্রাইভার এবং মালিকদের কমপক্ষে তিনটি ক্ষুদে বার্তা পাঠাবে, যাতে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় শব্দদূষণ না করার বিষয়ে সচেতন হতে পারে। এই বার্তাগুলোর মাধ্যমে ড্রাইভারদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শব্দদূষণ কমিয়ে এলাকার পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও টেকসই রাখা সম্ভব হবে।
এছাড়া শব্দদূষণ মুক্ত টেকসই এলাকা হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে প্রতিষ্ঠা করতে আরও বিভিন্ন সংস্থা জনসচেতনামূলক নান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বেবিচক এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সকল গাড়ির চালক, যাত্রী এবং গাড়ি মালিকদের প্রতি এই উদ্যোগকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য স্থানেও একইভাবে শব্দদূষণ মুক্ত করা সম্ভব হবে এবং আমরা সকলেই অভ্যাসগতভাবে হর্ন ব্যবহারের প্রবণতা থেকে বিরত থাকব।