প্রাথমিক শিক্ষায় শুদ্ধাচার অনুশীলন শীর্ষক কর্মশালা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এই অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন দেখাচ্ছে এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নিরলস পরিশ্রম করছে। তবে অপ্রিয় বাস্তবতা এই যে, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশের ব্যাপক উন্নতি হলেও সমাজে মানুষের মূল্যবোধ প্রায় পুরোটাই লোপ পেয়েছে।
মানুষের মধ্যে দুর্নীতি ও অপরাধ প্রবণতা অনেক বেড়েছে এবং তা ক্রমবর্ধমান। আসলে সমাজের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের চলমান সমস্যা অনেকটা ব্লাড ক্যান্সারের রূপ নিয়েছে। ব্লাড ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য যেমন একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর গোটা শরীরের রক্ত বদল করতে হয়; আমাদের সমাজের চলমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক অপরাধমূলক সমস্যা নিরসন করতে হলে একইভাবে, গোটা সমাজের মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তন দরকার, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার -- যা স্বল্পমেয়াদে সম্ভব নয়।
আমাদের সমাজে চলমান দুর্নীতি ও বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের উপায় হিসেবে অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘প্রাথমিক শিক্ষায় শুদ্ধাচার অনুশীলন’ শীর্ষক কর্মশালা শনিবার বিকাল ৩টায় ঢাকা অফিসারর্স ক্লাব ভবনের তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় বলা হয় বাংলাদেশে যত প্রকার দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়, তা মূলত ৪ টি কারণে ঘটে থাকে (১) এদেশের শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা; (২) পারস্পারিক আস্থাহীনতা; (৩) প্রতিহিংসাপরায়ণতা এবং (৪) পরমুখাপেক্ষিতা। বলা হয়, এই ৪ (চার) টি মৌলিক কারণের উৎপত্তি হয়েছে সমাজে মানুষের মধ্যে অবাধ মিথ্যাচার এবং দেশপ্রেম, ধর্ম ও নৈতিকতাবোধের অভাব থেকে- যা দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নতির পথে অনেক বড় বাঁধা।
কর্মশালায় উপস্থিত সরকারের অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এনজিও প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অংশগ্রহনকারিগণ ৬টি দলে বিভক্ত হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য একটি শুদ্ধাচার অনুশীলন কৌশলপত্রের সুপারিশ করেন যা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে, শুদ্ধাচার অনুশীলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মনে বর্তমানে দেশের বড়দের মধ্যে থাকা উল্লিখিত ৪টি বদগুণ কখনো দানা বাঁধতে পারবে না। এর ফলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা সহজতর হবে বলে কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়।
কর্মশালার প্রথম পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সোহরাব হোসাইন বলেন, শুদ্ধাচার অনুশীলনে কার্যকর ফল পেতে গেলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে শুদ্ধাচার অনুশীলনের বিকল্প নেই। তিনি এ ধরণের একটি আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন অর্পণ--দর্পণ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারমিনা পারভিন।
কর্মশালার সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী মিজ রুমানা আলী এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শাসন ব্যবস্থায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করতে চান যাতে জনগণ তার সুফল ভোগ করতে পারে। তিনি বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর ‘’দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর’ দেশে রুপান্তর করতে চান ।
তিনি কর্মশালার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুদ্ধাচার অনুশীলনের প্রস্তাব যুগোপযোগী মনে করেন । সরকার থেকে এ ধরণের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা যেতে পারে। তবে যে কোন সরকারি কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম কানুন রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের মঙ্গল উপযোগী যে কোন যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করে থাকেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, চেয়ারম্যান, ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্স বলেন এ কর্মশালার প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় শুদ্ধাচার অনুশীলনের জন্য একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের পাশাপাশি ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার মানুষ গড়ার একটা বুনিয়াদ তৈরি হতে পারে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে সাবেক মুখ্য সচিব, ড মো. আবদুল করিম, বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও সাবেক যুগ্মসচিব আফরোজা পারভীন, অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন, মেহেরপুর থেকে আগত সাবেক শিক্ষক ও সমাজ সেবক মো. সিরাজুল ইসলাম তাঁদের বক্তব্য দেন।