Logo
Logo
×

কর্পোরেট নিউজ

প্রতিবন্ধীদের উৎপাদিত ১২১ পণ্যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মৈত্রী শিল্প

Icon

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম

প্রতিবন্ধীদের উৎপাদিত ১২১ পণ্যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মৈত্রী শিল্প

১৯৮৩ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে গাজীপুরের টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মৈত্রী শিল্প। এই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিয় কার্যালয় হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ২শতাধিক শারীরিক প্রতিবন্ধী এই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষন নিয়ে মুক্তা পানিসহ ১২১টি পণ্য উৎপাদন করছে। এসব পণ্যের বদৌলতে মৈত্রী শিল্প রুগ্ন শিল্প থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর পালে লেগেছে উন্নয়নের হাওয়া। ‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় সম্পদ’ এই প্রতিপাদ্যকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। সারাদেশের মোট ৮টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা, রংপুর ও চট্রগ্রাম বিভাগে এই প্রতিষ্ঠানের শাখা আছে। বাকী ৫ বিভাগে শাখা খোলার কাজ চলছে সরেজমিন মৈত্রী শিল্প ঘুরে পাওয়া যায় এসব তথ্য।

মৈত্রী শিল্পের কারখানা ব্যবস্থাপক মো: মহসীন আলী যুগান্তরকে জানান, এই প্রতিষ্ঠানের মোট ২৫৫ জন লোকবলের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীদের পরিশ্রমে প্রতিদিন উৎপাদিত ৫০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ বোতলজাত মুক্তা পানি সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং তা বিক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান এই প্রতিষ্ঠান। এ পানি ২৫০ মি.লি থেকে ৫ লিটার পর্যন্ত ৭ সাইজে ৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই বিশুদ্ধ পানি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান গামলা, বালতি, জগ, মগসহ প্রতিদিন ১২০ প্রকারের ৫হাজার প্লাস্টিক পণ্য তৈরী করছে যা ধরন ও আকার ভেদে ১১ থেকে ৪২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে এর তিনটি ও কারখানার পাশে একটি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এসব পণ্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কারাগারে।

তিনি আরও জানান, এবারের ২৮তম আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলায় দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করে মেলার সৌন্দর্য বৃদ্ধি, প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত পণ্য ও সেবার মান দর্শকেদের প্রশংসা অর্জন করায় দেশসেরা পুরস্কার পেয়েছে মৈত্রী শিল্পের মুক্তা পানি। এ নিয়ে পরপর তিনবার বেস্ট এ্যাওয়ার্ড পেয়ে হ্যাট্রিক করেছেন এ প্রতিষ্ঠান। মিনি প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হয়।

কারখানায় গিয়ে কথা হয় একাধিক শারীরিক প্রতিবন্ধী কর্মজীবীর সাথে। তারা জানালেন তাদের সুখ-দুঃখের কথা। তাদের সকলেই এ প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষন নিয়ে এখানেই চাকুরি করছেন। জন্মলগ্ন থেকেই দুই হাত ও শীরর প্রায় বিকলাঙ্গ পাবনা সুজানগরের সোহেল শেখ (৩৪)। শিক্ষানবীশ মেশিন অপারেটর হিসেবে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকুরির সুবাদে মনে তার আনন্দ। বিয়ে করার জন্য পাত্রী দেখছেন তিনি। 

পোলিও রোগে ডান পা অচল ঝিনাইদহ শৈলকূপার ওয়ালিয়ার রহমানের (৪০) মাসিক বেতন ২৪ হাজার টাকা। মেশিন সহকারী পদে চাকুরী করে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সুখে কাটছে তার দিন।

জন্মগত ভাবেই হাত-পা বিকল প্রায়, মুখেও কথা অস্পষ্ট মানিকের (৩৫) বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুরে। প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন প্লাস্টিক পণ্যের শোরুমে ১৭ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি করে সদ্য বিবাহিত মানিক স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে সুখে আছেন। 

টাইফয়েডে দুই পা ও সড়ক দূর্ঘটনায় এক হাত হারানো ঢাকার নবাবগঞ্জের সজলের (৩২) বেতন ১২ হাজার টাকা। শিক্ষানবীশ মেশিন অপারেটরের চাকুরী করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি ভালো আছেন।

টাইফয়েডে দুই পা অচল জামালপুর মাদারগঞ্জের হাফিজুর রহমান (৫৩) হুইল চেয়ারে বসে স্টোর অফিসার পদে ৩৭ হাজার টকা বেতন পান। ১৯৮৭ সালে তিনি চাকুরী পান এই প্রতিষ্ঠানে। স্ত্রী হারানো হাফিজুর রহমান এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সুখে আছেন। তিনিই সবচেয়ে প্রবীন স্টাফ এই প্রতিষ্ঠানের।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মেত্রী শিল্পের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো: সেলিম খান যুগান্তরকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূলধারাতে অন্তর্ভুক্ত ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করছে শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মৈত্রি শিল্প। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধীরা যাতে সামিল হতে পারে সে লক্ষে তাদেরকে প্রশিক্ষন দিয়ে দক্ষ মানব সম্পদে রুপান্তর করা হচ্ছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান রুগ্ন শিল্প থেকে আধুনিকায়ন হয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। প্রতিবন্ধীরা এখন আর সমাজের বোঝা নয় সম্পদ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম