টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ভূমিকা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:২৮ পিএম
দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে বাংলাদেশে সাফল্যের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিত্য-ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল)।
আধুনিক জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবসা কাজ করে আসছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। জাতীয় উন্নয়নশীল কার্যক্রম ও পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশে ইতিবাচক সমাজ তৈরিতে প্রভাব রেখে চলেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ (ইউবিএল)।
১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ফ্যাক্টরি (কেজিএফ) স্থাপনের মধ্য দিয়ে ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। বর্তমানে লাক্স, লাইফবয়, সার্ফএক্সএল, ক্লোজআপ, সানসিল্ক, পন্ডস, ভ্যাসলিন, ডাভ এবং পিওরইট সহ প্রতিষ্ঠানটির ২৬টিরও বেশি ব্র্যান্ড বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ বৈশ্যিক ব্রিটিশ কোম্পানি ইউনিলিভারের অংশ এবং এর সদর দপ্তর যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। যৌথ মালিকানাধীন 'ইউনিলিভার বাংলাদেশ' এ ৩৯.২৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের। কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কর্মরত আছেন জাভেদ আখতার।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতি ১০টি পরিবারের ৯টি পরিবারে তাদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটাতে ইউনিলিভারের এক বা একাধিক পণ্য ব্যবহার করছেন। ইউনিলিভার বাংলাদেশের সুশৃঙ্খল বিস্তৃত সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটি গ্রাহকের দোরগোড়ায় শুধুমাত্র পণ্যই পৌঁছে দিচ্ছে না, একই সাথে কল-কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিল্পায়ন এবং দেশের কর্মসংস্থানেও অবদান রাখছে।
বর্তমানে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ৭টি ফ্যাক্টরি রয়েছে, যার একটি নিজস্ব ফ্যাক্টরি এবং বাকি ৬টি কন্ট্রাক্ট ম্যানুফেকচারিংয়ের আওতায় ইউনিলিভারের তত্ত¡াবধানে বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুত করে থাকে। ইউনিলিভার বাংলাদেশের উৎপাদিত ৯৫ শতাংশ পণ্যই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়।
ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে একটি টেকসই দেশ ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছে দিতে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল (এলএফএইচ) প্রতিষ্ঠা করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
২০০৩ সালে ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড লাইফবয় ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশিপের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জাহাজের ওপর ভাসমান এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এ হাসাপাতালের মাধ্যমে ছয় লাখেরও বেশি চরাঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছে।
১৯৯০ সাল থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশের শিশু ও অভিভাবকদের হাত ধোয়া প্রশিক্ষণ এবং দাঁত পরিষ্কার রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে আসছে ইউনিলিভার। কেবল ২০২১ সালেই ইউবিএল এ প্রোগ্রামের আওতায় ১৩টি উদ্যোগের মাধ্যমে সারাদেশের পাঁচ কোটি জনগণের কাছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
এ উদ্যোগ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) পাঁচটি লক্ষ্য পূরণে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করেছে। এছাড়াও, কোভিড-১৯ এর সময় বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের সহায়তা করতে ৪৫ লাখ প্রয়োজনীয় কিট সরবরাহের পাশাপাশি ৮ কোটি টাকার হেলথ অ্যান্ড হাইজিন পণ্য সহায়তা প্রদান করেছে এফএমসিজি প্রতিষ্ঠানটি।
দেশের প্লাস্টিক সার্কুলারিটি অর্জনের জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ নিজের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং ইপসা (ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন)-এর সঙ্গেও কাজ করেছে এ প্রতিষ্ঠান।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১০ শতাংশ প্লাষ্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে প্লাষ্টিক সার্কুলারিটি নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রায় তিন হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর জীবিকার উন্নয়ন ঘটেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
পরিবেশ সংরক্ষণ পরিকল্পনার বাস্তবায়নে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত অ্যাকশন প্ল্যান (২০২১-২০৩০) এর মধ্যে ইউবিএল এর প্লাষ্টিক সার্কুলারিটির এই উদ্যোগ একটি সফল মডেল।
‘ইউনিলিভার কম্পাস’ শীর্ষক বৈশ্বিক টেকসই ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে ‘ক্লাইমেট ট্রানজিশন অ্যাকশন প্ল্যান’ এর আওতায় কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রমে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারে এবং ২০৩৯ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ভ্যালু চেইন জুড়ে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা একেবারেই শূন্য হয়।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তরুণদের কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প শিক্ষিত বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে কাজ করছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। পল্লীদূত কোম্পানিটির এমন কিছু উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশকদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে একেবারে প্রত্যন্ত ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোতে গিয়ে পণ্য সরবরাহের কাজ করে এসব তরুণরা।
ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরির জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘বিজমায়েস্ট্রোস’। ট্যালেন্ট বিল্ডার হিসেবে ইউনিলিভার কয়েক প্রজন্ম ধরে খ্যাতনামা অনেক ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছে, যারা দেশে-বিদেশে কেবল ইউনিলিভারেই নেতৃত্ব দিচ্ছে না, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে নানা প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করছে।
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কারণে ইউনিলিভার সবার কাছে ‘স্কুল অব লিডার্স’ নামেও পরিচিত। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি তরুণ এবং বাংলাদেশে ১০ লাখ তরুণকে দক্ষ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণকে শক্তিশালী করতে প্রতিষ্ঠানের পুরো কার্যক্রম জুড়ে ডিইআই অর্থ্যাৎ ডাইভার্সিটি, ইকুইটি অ্যান্ড ইনক্লুশন অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ অনন্য উদ্যোগ শুধু ইউনিলিভারে কাজ করা ব্যক্তিদেরই নয়, বরং ভ্যালু চেইনে যুক্ত সকলকেই প্রভাবিত করে।
২০২৩ সালে ইউবিএল ‘এনভায়রনমেন্ট ক্যাটাগরি’তে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’; একটি বৈচিত্র্যময়, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক কর্মশক্তি তৈরির লক্ষ্যে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণে অনন্য দৃষ্টান্ত অর্জন করায় ‘এফআইসিসিআই ডিইআই চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ এবং অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্টস (এসিসিএ) এর কাছ থেকে ‘এসিসিএ অনুমোদিত এমপ্লায়ার প্লাটিনাম’- এর স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এছাড়া ‘বাংলাদেশ সি-সুটস এওয়ার্ডস-২০২৩’ অর্জন করেন ইউবিএল- এর ম্যানেজমেন্ট কমিটির দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা।